ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, কালিগঞ্জ : কালিগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের অভিযানে মাদক উদ্ধার হলেও ব্যবসায়ীরা থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে থানায় মামলা হলেও গড ফাদাররা থাকছে পলাতক। খানজিয়া, শুইলপুর, বসন্তপুর ও উকশা সীমান্ত দিয়ে হঠাৎ করে ভারত থেকে আসছে মাদকের অনেক বড় বড় চালান। পুলিশের অভিযানে গত ১ মাসে ধরা পড়েছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ফেনসিডিল, মদ ও গাঁজা। তবে যেটুকু ধরা পড়েছে তার বহুগুণ ঢুকে গেছে দেশের অভ্যন্তরে।
থানা ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, এসব মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছে এলাকার গোটা কয়েক জন ব্যক্তি। তারা এই মাদক ব্যবসা করেই বিপুল সম্পতির মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে কোটিপতি জহুর আলী ও আমজাদ অন্যতম তাদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। সম্প্রতি জহুর আলী থানায় এসে আত্মসমর্পণ করে ভবিষ্যতে আর মাদক ব্যবসা করবে না বলে অঙ্গীকার করে। এরপরও সে কালিগঞ্জ থানায় ৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার মামলার আসামী হয়ে এলাকার বাইরে অবস্থান করলেও সেখান থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তার মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে জহুর আলীর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা (৩৮), ছেলে শাহীন আলম (২৫) ও ভাই মাসুদ (৩৫)। তাছাড়া জহুর আলীর স্ত্রী, ছেলে এবং ভাইয়ের নামে রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। বর্তমান তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা ও মাসুদের নামে ৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও তার স্ত্রী নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছে।
কিন্তু পুলিশ তাকে অজ্ঞাত কারণে গ্রেফতার করছেনা বলে জানা যায়। সম্প্রতি ৫৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ পুলিশের হাতে আটক হয় জহুর আলীর ছেলে শাহীন। তাদের যাবতীয় মাদক ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করেন নলতার জনৈক খালেক নামের এক ব্যাক্তি। এই মাদক ব্যবসায়ী জহুর হয়েছে জিরো থেকে হিরো। তার শুইলপুর ও খুলনার রূপসা এলাকায় রয়েছে বিশাল আকৃতির বাড়ি। এছাড়াও নলতায় তিনি নির্মাণ করছে একটি মার্কেট। কোটি কোটি টাকার সম্পদ তিনি অর্জন করেছে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে। অপরদিকে মাদকের জগতে কোটিপতি আমজাদ একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। ফেনিসিডিল, ইয়াবাসহ নানা প্রকার মাদকের ব্যবসা করে সে তৈরি করেছে আলীশান বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। ৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কোটিপতি আমজাদ ও এজাহারনামীয় আসামি হলেও তাদেরকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত অক্টোবরে কালিগঞ্জ থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে প্রায় ৪ হাজার বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল, ১ কেজি গাঁজা ও ৪ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার হয়েছে। এসব মাদক মূলত: খানজিয়া, শুইলপুর, বসন্তপুর ও উকশা সীমান্ত দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকেছে। অধিকাংশ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও মাদক চোরকারবারীরা থেকে যাচ্ছে নিরাপদে। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লস্কর জায়াদুল হক জানান, ৮ অক্টোবর রাতে উপজেলার শুইলপুর সীমান্তে একটি আম বাগান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৬৫০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও আসামি আটক করা সম্ভব হয়নি। ১৯ অক্টোবর ভোরে কালিগঞ্জে বাগনলতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনটি ড্রামের ভিতর থেকে পাওয়া যায় ৩ হাজার বোতল ফেনসিডিল। এব্যাপারে মামলা হলেও কেউ আটক হয়নি। ২৮ অক্টোবর রাতে শুইলপুর সীমান্তের বাগবাটির জালালতলা থেকে আরও ১২৫ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধারের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৩০ অক্টোবর ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের উজায়মারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে একটি ধান ক্ষেত থেকে ৪ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার হয়েছে। এখানেও মাদক চোরাকারবারীদের চিহিৃত করা সম্ভব হয়নি। ১০ অক্টোবর রাতে ৯০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক হয় গৌর বিশ^াস (৩৬) ও রফিকুল ইসলাম (৩২) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়াও ৮ অক্টোবর সকালে উপজেলার কৃষ্ণনগর বাজার এলাকা থেকে ১ কেজি ভারতীয় গাঁজাসহ মোস্তাফিজুর রহমান (৪৭) নামে এক ব্যক্তি আটক হয়। থানার অফিসার ইনচার্জ আরও জানান, শুইলপুর ও খানজিয়া এলাকা দিয়ে মূলত: বেশীরভাগ মাদক দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদকের অংশ বিশেষ আটক করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে কালিগঞ্জ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাদক দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের ঘটনায় বিজিবি’র উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন সচেতন মহল। তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর বেড়ীবাঁধ এলাকায় ওই চক্রের আনাগোনার কারণে ভারত থেকে মাদক পার হচ্ছে এমনটাই ধারণা করছে স্থানীয়রা। কয়েক মাস যাবত মাদক কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি এই মাদক চোরাকারবারীরা বেশ তৎপর হয়েছে। প্রায় সময়ই ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক আটকের ঘটনাই তার প্রমাণ। একাধিক সূত্র জানায়, সন্ধ্যার পরপরই সীমান্ত নদীর বেড়ীবাঁধে মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্যরা অবস্থান নেয়। সুযোগ বুঝে ভারতের এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মাদক নদী পার করিয়ে নেয়। এরপর তারা নানা পদ্ধতিতে রাজধানীসহ দেশের অভ্যন্তরে পাচার করে থাকে। এসব মাদকের অতি সামান্য অংশই আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী আটক করতে সক্ষম হয়।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ১৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) শুইলপুর ক্যাম্পের নায়েক আহম্মেদ আলী জানান, মাদক পাচারের বিষয়ে আমরা কঠোর ভূমিকা পালন করছি সাথে সাথে সিমান্ত এলাকায় আমাদের টহল আরো জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যম দিয়ে আমরা মাদক চোরাকারবারীদের চিহিৃত করে তাদের দমন করার চেষ্টা করছি।এদিকে এই ভাবে যদি মাদক চোরাকারবারীরা অনায়াসে বড় বড় চালান ভারত থেকে এনে দেশের অভ্যন্তরে পাচার করতে সক্ষম হয় তাহলে যুব সমাজ ধংসের মুখে পতিত হবে এমনটাই ধারণা করছে সচেতন মহল।
পূর্ববর্তী পোস্ট