কৃষ্ণ দাস, তালা : ছেলে পুলিশের সার্জেন্ট পরিচয়ে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই অবৈধভাবে কপোতাক্ষের পাটকেলঘাটার আচিমতলা এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন একই থানার লাল চন্দ্রপুরের নূরুল ইসলাম শেখ। এতে অদূর ভবিষ্যতে বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বসে পড়ার পাশাপাশি সর্বশেষ সরকারের ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খনন প্রকল্পে বিরুপ প্রভাব পড়ার আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ।
কপোতাক্ষ নদের সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়নের আচিমতলা এলাকা থেকে সরকারি অনুমোদন না নিয়েই বালু উত্তোলন করছেন ঐ এলাকার লাল চন্দ্র পুরের মৃত মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে নূরুল ইসলাম শেখ। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ১টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে এর সত্যতা মেলে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, যশোরের কেশবপুরের বাউশোলা গ্রামের জনৈক শফিকুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদারকে প্রতি ঘন ফুট ৩ টাকা চুক্তিতে নূরুল ইসলাম তার নিচু জমিতে বালু উত্তোলন করে উঁচু করছেন। তিনি জানান, গত প্রায় ১০ দিন ধরে তারা সেখান থেকে বালু উত্তোলন করছেন। কথা হয় সেখানে উপস্থিত জমি মালিক নূরুল ইসলামের সাথে। এব্যাপারে তিনি জানান, তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই তারা বালু উত্তোলন করছেন।
তাৎক্ষণিক এব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফরিদ হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, বালু উত্তোলনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এসময় তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান। তালা উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) অনিমেষ বিশ্বাসের নিকট মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এনিয়ে সরুলিয়া ইউনিয়নের তহশীলদার তারক চন্দ্র মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও স্যার তাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের আশ্বাস দেন।
এদিকে সাংবাদিকরা বালু উত্তোলনের তথ্য সংগ্রহে ঘটনাস্থলে গেলে বালুর মালিক নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা আস্ফোলন করতে থাকেন এবং বলেন,তারা ছেলে যশোরের সার্জেন্ট মনিরুল সব কিছু সেই মিটিয়ে ফেলবেন। এসময় তিনি তার ছেলে মনিরুলের মোবাইল নং দিয়ে তার সাথে কথা বলতে বললে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোন ব্যাক করে তিনি সাংবাদিকদের সম্পর্কে কটুক্তি করেন।
প্রসঙ্গত,এক কালের ¯্রােতসীনি কপোতাক্ষ নদ গত কয়েক বছরে পলি জমে নব্যতা হারিয়ে দির্ঘ দিন বর্ষা মৌসুমে উপকূলীয় এলাকা জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছিল। এর পর এলাকাবাসীর আন্দোলনের ফলে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ নদ খননের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সেখান থেকে বালু উত্তোলন গোটা প্রকল্পকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে বলে মনে করছেন নদী সংশ্লিষ্টরা।
এলাকাবাসী জানান,মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ঐএলাকার পার্শ্ববর্তী ভূমির তলদেশ থেকে জালের ন্যায় বালু সরে যায়। এতে কয়েক বছরে আক্রান্ত এলাকা ধ্বসে পড়তে পারে। আর এমনটি হলে আগাম আশংকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসী। এব্যাপারে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি স্থায়ী সমাধানের জোর দাবি জনিয়েছেন।
সর্বশেষ সরুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী নাজিম উদ্দিন মোবাইলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন যে,ইউএনও’র নিদের্শে তারা ঘটনাস্খলে গিয়ে মৌখিকভাবে সেখান খেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করেও দিয়েছেন।