জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দেশ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এর তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের কারণে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। খবর আল জাজিরা।
রোববার বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রীয় এভিনিউ এবং স্কোয়ারে ফিলিস্তিনি পতাকা নাড়িয়ে এবং ফিলিস্তিনিদের পক্ষে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ অংশ নেন বিক্ষোভকারীরা। ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে দেখতে চায় ফিলিস্তিনিরা।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন। তার এমন ঘোষণার কারণে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। গত পাঁচদিন ধরেই এই সহিংসতা চলছে। এসব সহিংসতার ঘটনায় গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অপরদিকে, জেরুজালেমে একটি বাস স্টেশনে এক ইসরায়েলি সেনাকে ছুড়িকাঘাতের ঘটনায় এক ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, লেবাননের রাজধানী বেইরুতে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় আগুন ধরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়েছে এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পাথড় ছুড়ে মেরেছে। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে গ্যাস এবং জল কামান নিক্ষেপ করে।
বেইরুতে বিক্ষোভে অংশ নেয়া আদনান আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের মতো লোকজন থাকলে ট্রাম্পের জেরুজালেম বিষয়ে সিদ্ধান্ত কখনও বাস্তবায়ন হবে না।
মুখে কালো মাস্ক পড়া আরেক বিক্ষোভকারী, আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করায় লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের পাশে কেউ নেই। কোনো আরব দেশও নেই। আমরাই ফিলিস্তিনি পতাকা তুলে ধরবো।
আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার ট্রাম্পকে তার সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য আহ্বান জানান এবং জেরুজালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্র নীতি থেকে সরে আসার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ মার্কিন দূতাবাসের বাইরে একটি র্যালিতে অংশ নিয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটির জনগণ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা এবং ‘প্রে ফর ফিলিস্তিন’ লেখা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
র্যালির অন্যতম প্রধান আয়োজক নুরজান্নাহ নুরওয়ানি বলেন, আমরা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেই সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তাদের এই সিদান্ত থেকে সরিয়ে আনা হোক।
জাকার্তার এক নারী বিক্ষোভকারী ট্রাম্পকে তার মগজ ব্যবহার করে কাজ করতে এবং জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন।
এদিকে, তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে তুর্কি এবং ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ইয়েনিকাপি স্কয়ারে বিক্ষোভে অংশ নেন।
এছাড়া মরক্কোর রাজধানী রাবাতে ‘জেরুজালেম ফিলিস্তিনের’ লেখা ব্যানার নিয়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন বিক্ষোভকারীরা।
ভারতের কাশ্মিরের বাসিন্দারাও ট্রাম্পের এই ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছেন। শ্রীনগরের লোকজন তাদের দোকান-পাট বন্ধ রেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মিসরেও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। পাকিস্তানের করাচিতে শত শত বিক্ষোভকারী মার্কিন কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেয় কিন্তু পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করেছে।