একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার মানদণ্ডে মিলবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং প্রতিপক্ষ দলের যে কোনো প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়ে আসার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরাই নৌকা পাবেন। এতে কপাল পুড়বে জনবিচ্ছিন্ন, দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশ কাটিয়ে চলা বিতর্কিত এমপিদের। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রমতে, আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন ক্ষমতাসীনরা। এলাকায় উন্নয়ন, জনপ্রিয়তা, কোন্দল, দুর্নীতিসহ বিগত কয়েক বছরের এমন নানা বিষয় তুলে ধরে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি-মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত আমলনামা তৈরি করা হয়েছে। একাধিক গোপন জরিপের মাধ্যমে প্রত্যেক আসনে ‘গুড ইমেজ’-এর প্রার্থী বাছাই করছে দলটি। জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস আগেই প্রার্থী বাছাই করে এগিয়ে থাকতে চান নীতিনির্ধারকরা। ক্লিন ইমেজ, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নৌকা দিলে বিজয়ী হওয়া সহজ হবে এমনটাই মনে করছেন তারা। এ বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের দেওয়া হচ্ছে সবুজ সংকেত। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, এলাকায় অধিক জনপ্রিয়, ক্লিন ইমেজ এবং দলের পরীক্ষিত নেতাদের হাতেই নৌকা তুলে দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘চারটি মানদণ্ড সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় জরিপ চলছে। ওই জরিপের রিপোর্ট এবং সর্বশেষ মনোনয়ন দেওয়ার সময় তৃণমূল নেতাদের মতামত নিয়েই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে দলের যতই বাঘা বাঘা নেতা-এমপি বা মন্ত্রীই হোক না কেন, নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তা ও ইমেজ হারানো কাউকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ঝুঁকি নেবেন না তাঁরা। এ জন্য তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে দফায় দফায় গোপন জরিপের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিশেষ পরিকল্পনা হলো, নির্বাচনে বিজয়ী হতে কোথাও প্রার্থীর ইমেজ আবার কোথাও দলের ইমেজকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া হচ্ছে— নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, রাজনীতিক হিসেবে এলাকায় কতটা পরিচিত, সংগঠক হিসেবে কতটা দক্ষ, ভোটার ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক, দলের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা কেমন। আগামীতে যাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাদের ডেকে মাঠ গোছাতে বলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেছিলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত জরিপ করা হচ্ছে। সেই জরিপের ভিত্তিতে এলাকায় অধিক জনপ্রিয় এবং যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাদের সবুজ সংকেত দিয়ে এলাকায় কাজ করতে বলা হয়েছে। তারা নির্বাচনী এলাকায় সংগঠনকে গুছিয়ে নিচ্ছেন। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তাদের সবুজ সংকেত দিচ্ছেন।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ ও আস্থা তৈরি হয় এমন প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভায় সিটি নির্বাচনগুলোয় কোনো কোনো প্রার্থীকে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি মনে করেন, নির্বাচনের আরও যে সময় বাকি আছে তাতে চাইলে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভাবমূর্তি গড়া সম্ভব। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, স্বচ্ছ ও জনপ্রিয় প্রার্থীকেই সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগে অসংখ্য জনপ্রিয় প্রার্থী আছেন, তাদের মধ্য থেকেই প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে।