দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজধানীর চারটি স্কুল ও কলেজের কোচিংবাজ ৭২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের এমপিও বাতিল, স্থগিত এমনকি বরখাস্তও করা হতে পারে। তাদেরকে কারণ দর্শণোর নোটিশ দিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং–বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ওই সব শিক্ষককে তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে।
প্রথমত, এমপিওভুক্ত হলে এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন কমিয়ে দেওয়া বা বরখাস্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিওবিহীন শিক্ষক হলে প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া বেতন স্থগিত বা চাকরি থেকে বরখাস্তের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তৃতীয়ত, প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা, বেতন স্থগিতের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোচিং–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সরকার ওই সব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেবে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের।
কয়েক দিন আগেও দুদকের তালিকা অনুযায়ী কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত রাজধানীর ২৫ জন মাধ্যমিক শিক্ষককে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি করা হয়।
কোচিংবাণিজ্যে লিপ্ত ৭২ জন শিক্ষকের মধ্যে রয়েছে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ৩৬ জন, মতিঝিল স্কুল এন্ড কলেজের ২৪ জন, ভিকারুন নিস নূন স্কুল এন্ড কলেজের ৭ জন এবং রাজউক উত্তরা স্কুল এন্ড কলেজের ৫ জন শিক্ষক। এর মধ্যে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান করে গত বছরের ৪ঠা ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঢাকা মহানগরের স্বনামধন্য আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠায়। স্কুলগুলোর মধ্যে বেসরকারি চারটি ও সরকারি চারটি স্কুল রয়েছে।
বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৬ জন শিক্ষক, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, ঢাকা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ৭ জন, রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ জন রয়েছেন। আর সরকারি চারটি স্কুলের মধ্যে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন এবং ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, কোচিং বন্ধে কোনো আইন না থাকায় সাধারণত কোচিং বা টিউশনি থেকে উপার্জিত আয়ের ওপর কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স দেওয়া হয় না। ফলে এভাবে উপার্জিত আয় অনুপার্জিত আয়ে পরিণত হয়। কোচিং বাণিজ্যের ফলে যেভাবে অনৈতিক আয় ভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি এটি বুদ্ধিবৃত্তিমূলক মেধা সৃষ্টির প্রয়াসের পরিবর্তে অবৈধ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কোচিং এর কারণে শিক্ষার্থীরা বিশেষ সাজেশন অনুসারে স্বল্প সংখ্যক প্রশ্ন পড়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ফলে পূর্ণাঙ্গ বই সম্পর্কে তারা ধারণা পাচ্ছে না।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা মহানগরের স্কুল অথবা কলেজের কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষক -শিক্ষিকাদের বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে। ৬ সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধান টিমের দাখিলকৃত কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ৮টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তালিকাও পঠানো হয়।