ঢাকার নাজিম উদ্দীন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারেই সাধারণ বন্দী হিসেবে ঠাঁই হলো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পর গতকাল বিকাল থেকেই নতুন ঠিকানায় দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। রাখা হয়েছে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের অফিস কক্ষে। এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, আদালত থেকে ডিভিশন দেওয়ার আদেশ না দেওয়ার কারণে খালেদা জিয়াকে সাধারণ কয়েদি হিসেবেই রাখা হচ্ছে। তবে ডিভিশনের কাগজ পাওয়ার পর এখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হবে। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে রায় ঘোষণার আধা ঘণ্টা পর খালেদা জিয়াকে কড়া পুলিশি পাহারায় কারাগারে নেওয়া হয়। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সেবার জন্য তার দীর্ঘদিনের পরিচারিকা ফাতেমাকে তার সঙ্গে রাখার আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটির বেশি টাকা আত্মসাতে তার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে এই রায় দিয়েছেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের মধ্যে এইচ এম এরশাদের পর খালেদা জিয়াকেই দুর্নীতির দায় নিয়ে কারাগারে যেতে হলো। এ ব্যাপারে ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশের বাইরে আমরা এক চুলও নড়তে পারি না। সে জন্য গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগমকে রেখে খালেদা জিয়ার সেবা করতে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। কারাসূত্র বলছে, নাজিম উদ্দীন রোডেই বেগম জিয়াকে রাখতে গত ১৫ দিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত হলেও পুরাতন কারাগারের অভ্যন্তরের লাল ও হলুদ রঙের তিনতলা বিশিষ্ট ‘ডে কেয়ার সেন্টার’-কেই বেছে নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। দেওয়া হয় পুরনো রঙের ওপর নতুন রঙের আস্তরণ। জেল কোড অনুসারে ভিআইপি বন্দী রাখার জন্য ‘ডে কেয়ার’ সেন্টারের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির ডান পাশের দুটি কক্ষে লাগানো হয় নতুন টাইলস, সিলিং ফ্যান, হাইকমোড। গত দুই দিন আগে লাগানো হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি)। গত কিছুদিন ধরে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয় পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায়। সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছিলেন বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। সাধারণ মানুষও অনুমান করছিলেন কিছু একটা হতে যাচ্ছে পুরাতন কারাগারে। গত বুধবার কারাগারের আশপাশে নতুন করে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল থেকেই ওই এলাকায় জনসাধারণের চলাচলেও কড়াকড়ি করা হচ্ছে। কারাগারের চারদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও অবস্থান জোরদার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, সাধারণ কয়েদি হিসেবেই খালেদা জিয়াকে আমরা রেখেছি। আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে ডিভিশন দেওয়া হবে না। অন্য সব সাধারণ কয়েদিদের মতোই সব সুবিধা পাবেন তিনি। তবে তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক।
কারা সূত্র বলছে, নাজিম উদ্দীন রোডের পুরনো কারাগারে নেওয়ার পর প্রথমে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় জেল সুপারের পুরনো অফিস কক্ষে। কারাগার স্থানান্তরের আগে ওই কক্ষেই ছিল জেল সুপারের অফিস রুম। এ সময় সেখানে উপস্থি ছিলেন, জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর, জেলার মাহবুবুল ইসলামসহ কারা কর্মকর্তারা। এ সময় খুব বিমর্ষ অবস্থায় ছিলেন তিনি। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আগে থেকেই ওই কক্ষকেই থাকার জায়গা হিসেবে প্রস্তুত করে কারা কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারা চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। জেল কোড অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে রাতের খাবার দেওয়া হয়েছে ভাত, মাছ, সবজি এবং ডাল। সকালে দেওয়া হবে রুটি সবজি। তবে বেগম খালেদা জিয়ার কারা ব্যবস্থাপনার জন্য আগে থেকেই ডেপুটি জেলার শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মহিলা কারারক্ষী দল এবং ডেপুটি জেলার আশরাফ উদ্দীনের নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি দল গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ।
গত শতকের ৮০ এর দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ে ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হতে হয় খালেদা জিয়াকে। তখন তাকে সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাড়িটিতে গৃহবন্দী রাখা হয়েছিল। সর্বশেষ জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন খালেদা জিয়া। প্রায় ১ বছর ৭ দিন সংসদ ভবনের একটি বাড়িতে বন্দী রাখা হয়েছিল তাকে। ওই সময় খালেদার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোও গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জামিনে মুক্তি পান।