বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার সাজা নিয়ে আপাতত কম কথা বলতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি নেতাদের জানিয়েছেন,খালেদা জেলে থাকা অবস্থায় এই ইস্যুতে বিএনপি জনগণের সহানুভূতি পেতে পারে, এমন কোনও বক্তব্য বা আচরণ করা যাবে না। এমনকি নেতাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা বা উস্কানিমূলক বক্তব্যও পরিহার করতে নির্দেশ পাঠিয়েছেন দলীয় সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) খালেদা জিয়ার মামলার রায় হওয়ার পর দণ্ড নিয়ে আবোল-তাবোল বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও বক্তব্য না রাখতে নেতাদের প্রতি মৌখিক নির্দেশনা পাঠিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাদিক সূত্র জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘এই রায়কে ইস্যু করে সবাইকে সংযত হয়ে কথা বলতে হবে। সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, খালেদা জিয়া যাতে কোনোভাবেই জনগণের সহানুভূতি পেয়ে না বসেন। বিএনপি চাইবে তার (খালেদার) মামলার রায় রাজনীতিকরণ করে সুবিধা আদায় করতে। এই সুযোগ তাদের দেওয়া যাবে না।’
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা শেখ হাসিনার এই মৌখিক নির্দেশনার কথা নিশ্চিত করেছেন।
সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে আমরা এমন কোনও বক্তব্য দেবো না, যা বিএনপির পক্ষে যেতে পারে। আমাদের অবস্থান হবে— এটা বিচারিক বিষয়। তাছাড়া, এই মামলা গত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছে। আর মামলার রায় দিয়েছে আদালত। এখানে সরকারের যে কিছুই করার ছিল না, সেটা প্রতিষ্ঠিত করাই হবে আওয়ামী লীগে কৌশল। দলের সভাপতির নির্দেশনায়ও বলা হয়েছে— বক্তব্য ও বিবৃতিতে এগুলোই তুলে ধরতে হবে।
সভাপতিমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই ইস্যুতে আমাদের প্রতি নির্দেশনা হলো— ডোন্ট স্পিক ভেরি মাচ।’
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত হলো— বিএনপি যেহেতু খালেদা জিয়ার দণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাবে। সেখানে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে এই দণ্ড দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতের। এখানে রাজনৈতিক কোনও স্বার্থ নেই। এই লাইনে সবাইকে কথা বলতে হবে এবং বিএনপির মিথ্যাচারকে মিথ্যা প্রমাণ করতে হবে। তাই সতর্কভাবে সবাইকে কথা বলতে হবে।
নেতারা আরও বলেন, খালেদা জিয়া জেল থেকে বের হলে দুর্নীতিবাজ ও দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রচার চালাতে হবে আওয়ামী লীগকে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ কড়া ভাষায় সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ আসার পর সংবাদ সম্মেলনে সতর্কতা অনুসরণ করে বক্তব্য রাখেন নেতারা।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহল মনে করে, খালেদার সাজা হলেও জামিনে বের হয়ে আসবেন তিনি। ফলে বের হয়ে আসার পরে বিএনপির নেতাদের প্রতিক্রিয়া বুঝে পাল্টা প্রতিক্রিয়া প্রদান করবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। খালেদা জেলে থাকা অবস্থায় বিচারিক ব্যাপার বলেই গণ্য করতে হবে। তবে জেল থেকে তিনি বের হয়ে আসলে, তার দন্ড ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে জনমত তৈরি করতে কাজ করতে হবে আওয়ামী লীগ নেতাদের।