মহিলা বাসচালক প্রতিমা পোদ্দারের নিমতা পাইকপাড়ার গরিবের বাড়িটি এখন ভিআইপিদের পদচারনায় মূখর। আনাগোনা চলছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের। কারন দেখা করবেন প্রতিমার সাথে। কথা বলবেন তার সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে।
তবে প্রতিমাকে বাড়িতে পাওয়া অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার। কারন সেই ভোর ৩টা বাজতেই মিনিবাস নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সাথে তাঁর স্বামী শিবেশ্বর পোদ্দার। প্রতিমা বাস ভানান আর বাসে কন্ডাক্টারের কাজ করেন তার স্বামী।
সারাদিন বাস চালিয়েও বাড়ি ফিরে একটুকু বিশ্রামের সময় নেই প্রতিমার। বাড়িতে কাজের লোক নেই। ঘর মোছা থেকে শুরু করে বাসন মাজা, কাপড় কাচা, রান্না করা সবই করেন তিনি হাসতে হাসতে, এতটুকু ক্লান্তি নেই তাঁর।
বাড়িতে দুই মেয়ে রাখি এবং সাথি। রাখি বড়। সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পড়ছে অঙ্কে নিয়ে। জিমন্যাস্টিকে ন্যাশনাল করেছে, হয়েছে বাংলায় চ্যম্পিয়ন। ছোট মেয়ে সাথি নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে–ও জিমন্যাস্টিকে ভাল। দুই মেয়েকে মানুষ করাই স্বপ্ন প্রতিমার।
প্রতিমার বাবা নারায়ণচন্দ্র সাহা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মা হাসিরানি সাহা গৃহবধূ। দুই ভাই, দুই বোনকে নিয়ে খুব কষ্টে মানুষ হয়েছিলেন প্রতিমা। বিয়ের পর স্বামীর হাত ধরেই ছোট অটোরিক্সা এবং অ্যাম্বুল্যান্স চালানো শেখা। স্বামী প্রথমে অটোরিক্সা চালাতেন, পরে অ্যাম্বুল্যান্স। ৫ বছর পর বড় গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পান প্রতিমা।
২০১০ সালে মিনিবাস কেনা হয়। পরে তা বাতিল হয়ে যায়। ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিল হওয়ার নিয়মে। ফের চেষ্টা করেন কিভাবে নতুন মিনিবাস কেনা যায়। অবশেষে ব্যাংক লোন নিয়ে নতুন মিনিবাস কেনা হয়।
প্রতিমার বড় মেয়ে রাখি জানান , বাস কেনার ধার শোধ করতে এবং সংসার চালাতে মাকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে, বাড়ি ফিরে একটুও সময় পায় না। কাজের লোক রাখতে পারে না।
অন্য কন্ডাক্টর রাখা হয় না, যাতে তাদের টাকা দিতে হয়। তাদের মানুষ করতে মায়ের কষ্টের শেষ নেই। আমাদের অনেক সময় মা খাইয়েও দেয়, যাতে আমাদের কোনও কষ্ট না হয়। রাখি বলেন, আমার একটা চাকরি হলে মায়ের কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে।