এম বেলাল হোসাইন: সাতক্ষীরার দেবহাটায় অজ্ঞাত পরিচয় এক নারী ও এক শিশুর লাশ উদ্ধারের পর জানা গেছে তারা পরস্পর মা-মেয়ে। মা মেয়ে হত্যার মূল আসামী পুলিশ কনস্টেবল আলিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরার একদল পুলিশ সদস্য ঝিনাইদহে গিয়ে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় আবদুল আলিমকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন। আলিম ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলো।
মহেশপুর থানার ওসি লস্কর জায়াদুল হক বলেন, আবদুল আলিম সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানা-পুলিশে কমর্রত ছিলেন। ইতিমধ্যে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলাটি সাতক্ষীরার পুলিশই তদন্ত করবে।
এদিকে আবদুল আলিমকে রোববার সাতক্ষীরা আদালতে তোলার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সুধাংশু কুমার হালদার বলেন, যেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি ডাবল মার্ডারেরর মামলা। আমরা অভিযুক্ত আলিম কে নিয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সে কোথায় কিভাবে ছিলো। সে নিজে করেছে। নাকি কাউকে দিয়ে করিয়েছে। এসব জানার চেষ্টা করছি। আর অভিযানের থাকার কারণে তাকে হাজির করতে পারিনি।
অন্যদিকে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবীর দত্ত বলেন, আমার থানার কর্মকর্তারা অভিযানে রয়েছে। যেহেতু কনস্টেবল আলিমকে এখনো আমার থানায় হাজির করা হয়নি। সেকারণে অফিসিয়ালী তাকে গ্রেফতার বলা যাচ্ছে না। তাকে প্রাথমিক তদন্তে আলিম ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও তার মোবাইলের কললিষ্ট, ওই মহিলার সাতক্ষীরায় আসা এসব প্রশ্নে যে কোন জবাব দিতে পারছে না। যাইহোক অভিযান চলছে। অভিযান শেষ হলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার ইছামতী নদীতে এক দিনের ব্যবধানে দুটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরিচয় না মেলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে লাশ দাফন করা হয় একই কবরস্থানে। পরে তাদের পরিচয় জানা যায়। জানা গেছে তারা আসলে মা-মেয়ে। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুরে।
নিহত নারীর নাম রিপ্না খাতুন (২২)। তিনি মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের মুসা মিয়ার স্ত্রী। তাঁর সঙ্গে জীবন দিতে হয়েছে নিষ্পাপ শিশু মুন্নি আক্তারকে (৪)।
মুসা মিয়া বলেন, রিপ্নার বাবার বাড়িও যাদবপুরে। সাড়ে পাঁচ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। এক বছর পর জন্ম নেয় মুন্নি। বিয়ের আগে রিপ্নার সঙ্গে একই গ্রামের আবদুল আলিমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি তিনি জানতেন। তবে নিকটাত্মীয় হওয়ায় তিনি বিয়েতে রাজি হন। রিপ্না পুরোনো প্রেমিক আলিমকে ভুলে গেছেন বলে জানিয়েছিলেন।
মুসা মিয়ার ভাষ্য, প্রথম দিকে তাঁদের সংসারজীবন বেশ ভালো ছিল। কিন্তু রিপ্না মুঠোফোনে আলিমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। আলিম পুলিশের চাকরি করেন। তাঁর কর্মস্থল সাতক্ষীরায়। সেখানে আলিম বিয়ে করেছেন। একটি সন্তান রয়েছে।
রিপ্না খাতুন মেয়ে মুন্নিকে সঙ্গে নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে বের হন। বলে যান, মহেশপুর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন। এরপর থেকে কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় মুসা মিয়া মহেশপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এই নিখোঁজের পেছনে পুলিশের কনস্টেবল আবদুল আলিমের হাত থাকতে পারে বলে তিনি থানা-পুলিশকে জানিয়েছিলেন।
সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি সীমান্তের নদী ইছামতীর ছুটিপুর এলাকা থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। তবে লাশের কোনো পরিচয় মেলেনি। ফলে স্থানীয় চৌকিদার ফজর আলী থানায় একটি জিডি করেন। সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুর কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুধাংশু কুমার হালদার বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ইছামতীর নদীর বসন্তপুর এলাকা থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। ফলে থানার এসআই ইসরাফিল হোসেন একটি হত্যা মামলা করেন। তবে এ লাশেরও পরিচয় মেলেনি। ফলে একই কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়।
পুলিশ বলছে, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুধাংশু কুমার হালদার। তিনি নিহত নারীর ছবি দেশের বিভিন্ন থানায় পাঠান। ছবি দেখে ঝিনাইদহের মুসা মিয়া লাশটি তাঁর স্ত্রীর বলে শনাক্ত করেন। গত শুক্রবার তিনি সাতক্ষীরায় পৌঁছান। সঙ্গে মহেশপুর থানার একদল পুলিশও ছিল। পরে দেবহাটা থানায় গিয়ে মুসা ওই শিশুর লাশের ছবি দেখেন। সেটি তাঁর মেয়ে মুন্নি বলে শনাক্ত করেন।
মুসা মিয়া বলেন, তিনি স্ত্রী-সন্তানের লাশ পেতে চান। আদালতে রোববার আবেদন করবেন।