অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) ও সেবা সংস্থার গাড়ির জন্য রাজধানী ঢাকার রাজপথে পৃথক লেন রাখার প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেছে। ভিআইপি লেনের প্রস্তাবটি ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের। তারা প্রস্তাবটি পাঠিয়েছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় মতামত চেয়েছিল ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কাছে। আর ডিটিসিএ এ বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান তুলে ধরে মতামত দেওয়ায় প্রস্তাবটি মূলত এখানেই থেমে গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ডিটিসিএ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
‘ভিআইপিদের জন্য ঢাকায় আলাদা লেনের প্রস্তাব’ শিরোনামে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ওই দিনই মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদসচিবের কাছে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ওই দিন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সভা-সমাবেশে প্রস্তাবটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। টিআইবি, সুজনসহ বিভিন্ন সংস্থাও এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার পক্ষে জোরালো মত প্রকাশ করে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এমন ভিআইপি সংস্কৃতির বিপক্ষে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জরুরি সেবা সংস্থার গাড়ির জন্য আলাদা লেন করা যেতে পারে; ভিআইপিদের গাড়ি চলাচলের জন্য নয়। আমি মনে করি, ধীরে ধীরে দৃঢ়তার সঙ্গে ভিআইপি সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।
জানা গেছে, ডিটিসিএ বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে মতামত চূড়ান্ত করে। পরে তা ৬ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল রবিবার আলাপকালে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডিটিসিএ থেকে আমরা আমাদের মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
ডিটিসিএ-এর পক্ষ থেকে মতামত দিতে গিয়ে ঢাকার সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা আরএসটিপির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাতে ঢাকায় পাঁচটি মেট্রো রেল ও দুটি রুটে বিআরটি (দ্রুত বাস চলাচল পদ্ধতি), তিনটি বৃত্তাকার সড়ক, আটটি রেডিয়াল সড়ক, ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে, বাস নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সুপারিশ করা হয়েছে। তাতে আলাদা লেনের সুপারিশ করা হয়নি। এ ছাড়া ডিআইটিএস, এসটিপি, ডিএইচইউটিএস—এসব সমীক্ষায়ও আলাদা লেনের সুপারিশ নেই।
ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষ তাদের মতামতে বলেছে, সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা আরএসটিপির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে যানজট কমবে। পৃথক লেনের প্রয়োজনীয়তাও হ্রাস পাবে। মেট্রো রেল, বিআরটি, ঢাকা উড়াল সড়কসহ যানজট নিরসনের জন্য মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে। এ অবস্থায় আলাদা লেনে যানজট বাড়বে।