ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের ডিএনএ প্রযুক্তি এখন ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশের পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে কোডিস বা সিওডিআইএস (কম্বাইন্ড ডিএনএ ইনডেক্স সিস্টেম) নামে একটি সফটওয়্যার হস্তান্তর করেছে এফবিআই।
একই সঙ্গে সফটওয়্যারটি ব্যবহারের জন্য সিআইডির ১৮ সদস্যকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন এফবিআই প্রতিনিধিরা। ফরেনসিক বিভাগের ডিএনএ গবেষণাগারে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের ৫১টি দেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের মতোই ডিএনএ প্রফাইল সংরক্ষণ ও মেচিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পরও অপরাধী শনাক্ত করা যাবে। এতে সিআইডির দক্ষতা আরো বাড়বে।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তিনি বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে ৫১টি দেশের কাতারভুক্ত হলো, যাদের সিওডিআইএস (কম্বাইন্ড ডিএনএ ইনডেক্স সিস্টেম) রয়েছে। এফবিআইয়ের এই সফটওয়্যার এখন পুলিশ তাদের ডিএনএ গবেষণাগারে ব্যবহার করবে। এটি অপরাধ দমনে অত্যন্ত কার্যকর।’
তিনি আরো বলেন, অমীমাংসিত অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সিওডিআইএস। তবে যেহেতু নমুনার ওপর ভিত্তি করে এটি কাজ করে সেহেতু ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহে সতর্ক এবং দায়িত্বশীল থাকার পরামর্শ পুলিশকে দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম বাংলাদেশ পুলিশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে সিআইডির ডিআইজি লুৎফর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘এখন আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটি হচ্ছে ল্যাবরেটরি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলআইএমএস)। এতে কোনো ডাটা বেইস সুবিধা নেই। তাই সিওডিআইএস পেয়ে এখন ডিএনএ প্রফাইলের ডাটা বেইস করতে পারব আমরা, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’
অনুষ্ঠানে প্রগ্রাম ডিরেক্টর কার্ল ক্লাক, বাংলাদেশে এফবিআইয়ের প্রতিনিধি, কোডিস স্থাপনকারী এবং প্রশিক্ষকসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন।
সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) রোমানা আক্তার বলেন, ‘কোডিস সফটওয়্যারটি অনেক উন্নত দেশ ব্যবহার করে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরও ব্যবহার শুরু করেছে। এর মাধ্যমে ডিএনএ প্রফাইলিং ইনডেক্স বা তালিকার মাধ্যমে ডাটা বেইস তৈরি করবে। এতে পরবর্তী সময়েও আমরা অপরাধীদের সঙ্গে ডিএনএন প্রফাইল মেচিং করে দেখতে পারব। একই অপরাধী বারবার অপরাধ করলেও ধরা পড়বে।’
তিনি জানান, কোডিস ব্যবহারে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সহায়তা করবে সংশ্লিষ্টরা। গতকাল প্রযুক্তি হস্তান্তরের সঙ্গে ল্যাবের ১৮ সদস্যকে সফটওয়্যারটি ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আরো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।