নিজস্ব প্রতিনিধি : যথাযথ আইন অমান্য করে বহাল তবিয়তে চলছে কলারোয়ার কেরালকাতা ইউনিয়নের ইলিশপুরের রয়েল ভাটা। সেখানে অবাধে অবৈধ ভাবে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার মণ কাঠ, গাছ-পালা। ফলে ভয়াবহ বায়ু দূষণের মুখে পড়েছে এলাকাটি। দেখা দিয়েছে জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা।
অভিযোগ রয়েছে- এ অবৈধ এবং পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের অলিখিত বৈধতা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা। বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা আর পরোক্ষভাবে সহায়তায় ভাটা মালিকরা আইন অগ্রাহ্য করে কাঠ পোড়ালেও দেখার যেন কেউ নেই। দিনের পর দিন ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় প্রতিনিয়তই বায়ু দূষন হচ্ছে পাশাপাশি এর প্রভাব পরছে ভাটার আশপাশের ফসলী জমি এবং গাছপালার উপর। পরিবেশ সচেতন মানুষ এতে ক্ষুব্ধ হলেও তাদের করার কিছুই থাকছে না।
ইট পরিবহনের কাজে ফিটনেস বিহীন নিষিদ্ধ ঘোষিত শত শত ট্রলি ব্যবহৃত হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা গুলোও।
জানা গেছে- ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮৯ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী ফসলী জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ইট ভাটার জন্য অকৃষি জমি ব্যবহার করতে হবে এবং আইনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তা করতে হবে। যেমন ভাটায় ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার, জনবহুল এলাকায় ও ফসলি জমিতে ভাটা নির্মাণ না করা এবং ইট পোড়ানোর কাজে দেশীয় বা বনজ কোনো ধরনের কাঠ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরবর্তীতে কয়লা পোড়ানোর দিক নির্দেশনায় দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে। অথচ এসবের তোয়াক্কা না করে উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের ইলিশপুর রয়েল ভাটা।
রয়েল ভাটার ম্যানেজার তৌহিদুর রহমানের কাছে সাংবাদিরা কাঠ পৌড়ানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমরা উপজেলা প্রশাসনকে মাসিক দুই লক্ষ টাকা দেয়, সাংবাদিকেরা লিখে কিছুই করতে পারবেনা। আমাদের মালিক কবির হোসেন মাই টিভির সাংবাদিক। রিপোট করতে চেয়েছিল বলে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছিল। এছাড়া রিপোট করলে আপনার ব্যাবস্থা নেয়া হবে। আমরা যশোর জেলার লোক এভাবেই হুমকি প্রদান করেন সাংবাদিকের।
সরেজমিনে দেখা যায়- রয়েল ভাটা প্রতিনিয়ত কাঠ পুড়িয়ে ইট পোড়াচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবহার করছে ভ্যাকাস (পামওয়েলের গাদ)। প্রতিটি বেড়ে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে পুরোদমে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান- ভাটায় রাতে কাঠ পোড়ানো হয় সবচেয়ে বেশী। অনেকে কাঠ ভাটায় সংরক্ষন না করে পার্শ্ববর্তী বাড়িতে রেখে দেন। রাতের আঁধারে সেখান থেকে কাঠ নিয়ে পোড়ানো হয় ভাটায়। পুরোদমে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ।
রয়েল ভাটার মালিক আবার গত কয়েক বছরের ইটের বিনিময়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে ইট দিতে না পারায় এবছরও ভাটা জ্বালিয়ে ওই টাকা পরিশোধের চেষ্টা করছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভাটার এক শ্রমিক জানান- যেভাবে ইটের অগ্রিম টাকা নেয়া হয়েছে তার পরিশোধ করতে আরো ২ বছর ভাটা পরিচালনা করতে হবে। ইটের দাদন দেয়া টাকা নিয়েও চিন্তিত রয়েছেন ইলিশপুরের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী জানান- ইটভাটা নির্মানের সময় অকৃষি জমির সনদ বাধ্যতা মূলক থাকলেও আমার সময়কালে কলারোয়ার রয়েল ভাটা মালিক এ সনদের জন্য আমার নিকট আসেনি। অধিকাংশ ইট ভাটা গড়ে উঠেছে কৃষি জমিতে। ফলশ্রুতিতে দিনে দিনে কমছে কৃষি জমি। গ্রামের মধ্যে ইট ভাটা নির্মানের ছাড়পত্র পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে দেয় তা আমার বোধগম্য নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুল ইসলাম জানান- ইট পোড়ানো নির্গত ধোঁয়া মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। এতে ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এ সকল বিষয়ে ভাটা মালিক কবির হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান- বর্তমান কয়লার যে দাম তাতে কয়লা কিনলে ব্যবসা করতে পারবো না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানান- আমি ইতিমধ্যে দু’এক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। ভাটা মালিকদের মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। তারপরও ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো হলে সেসব ভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ভাটা পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীরা জানান- এলাকায় ইটের ভাটা হওয়ায় নগদ উপার্জনের আশায় অনেক দরিদ্র কৃষক চড়াদামে বিক্রি করছে জমির টপ সয়েল। এতে করে ওই সকল ফসলী জমি উর্বরতা হারাবে। কাঠ পোড়ানোর ফলে নির্গত কালো ধোঁয়া এবং তাপমাত্রার কারণে ভাটা পার্শ্ববর্তী জমিতে কমে গেছে ফসলের উৎপাদনও।
এদিকে পুরোপুরি অবৈধভাবে ইট ভাটার ব্যবসা পরিচালনা করলেও সংশ্লিষ্টদের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অবিলম্বে কেরালকাতা ইউনিয়নের রয়েল ভাটা বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট