স্বাস্থ্য ও জীবন: প্রচলিত একটি কথা আছে, প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম। ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে ব্রণ কি, কেন হয়, কি করণীয়।
ব্রণ কি: সেবাসিয়াস গ্রন্থি সেবাম নামে একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে যা ত্বককে মসৃণ রাখে। কোনো কারণে সেবাসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণের বাধার সৃষ্টি হয় এবং তা ভেতরে জমে ফুলে উঠে যা ব্রণ (ধপহব) নামে পরিচিত। ব্রণ তৈরি হওয়ার পর্যায়ে এর মুখ বন্ধ থাকায় সাদাটে দেখায়।
বন্ধ নালির মুখে জমাকৃত কোষগুলি আস্ত আস্তে কালো হয়ে গেলে তাকে কালো ফোঁটা বলে। প্রায়ই ব্রণের চারপাশে প্রদাহ শুরু হয় এবং এর রং লাল দেখায়। এর উপর জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে পুঁজ তৈরি হয়। বাইরে থেকে এদের ছোট দেখালেও এরা বেশ গভীর হতে পারে। এজন্য ব্রণে সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে দাগ থেকে যেতে পারে।
তেরো বছর থেকে উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত শতকরা নব্বই জনের এ রোগটি কমবেশি হয়ে থাকে। বিশ বছর বয়সের পর থেকে নিজে থেকেই এ রোগটি ভাল হয়ে যেতে থাকে। তবে এর ব্যতিক্রম যে হয় না তা নয়। কখনও কখনও বিশ থেকে তিরিশ বছর বয়সেও এটি দেখা দিতে পারে এবং অনেক বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ব্রণ কেন হয়: ব্রণের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত না হলেও সাধারণত দেখা যায় হজমের গোলমাল, সুরাপান, বয়ঃসন্ধিকালে কিংবা অন্যান্য কারণে অনেকের মুখে ব্রণ হয়।
আবার অনেকেই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ব্রনের অনেকগূলো কারণের ভিতর বংশগত কারণ একটি অন্যতম কারণ। প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামক এক ধরনের জীবাণু স্বাভাবিকভাবেই লোমের গোড়াতে থাকে। এন্ড্রোজেন হরমনের প্রভাবে সেবাম-এর নিঃসরণ ( মাথা, মুখ, ইত্যাদি জায়গায় তেলতেলে ভাব ) বেরে যায় এবং লোমের গোড়াতে উপস্থিত জীবাণু সেবাম থেকে ফ্রী ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে। অ্যাসিডের কারণে লোমের গোড়ায় প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং লোমের গোড়ায় কেরাটিন জমা হতে থাকে।
ব্রণের প্রকারভেদ:
১) প্রিমিন্সট্রুয়াল একনিÑ কোনো কোনো মহিলার মাসিকের সাপ্তাহ খানেক আগে ৫-১০টির মতো ব্রণ মুখে দেখা দেয়।
২) ট্রপিক্যাল একনিÑ অতিরিক্ত গরম এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে পিঠে, উরুতে ব্রণ হয়ে থাকে।
৩) একনি কসমেটিকাÑ কোনো কোনো প্রসাধনী লাগাতার ব্যবহারে মুখে অল্প পরিমাণে ব্রণ হয়ে থাকে।
৪) একনি ডিটারজিনেকসÑ মুখ অতিরিক্ত ভাবে সাবান দিয়ে ধুলেও (দৈনিক ১/২ বারের বেশি ) ব্রণের পরিমাণ বেড়ে যায়।
৫) স্টেরয়েড একনিÑ স্টেরয়েড ঔষধ সেবনে হঠাৎ করে ব্রণ দেখা দেয়। মুখে স্টেরয়েড, যেমনÑ বটানোবেট ডার্মোভেট জাতীয় । ঔষুধ একাধারে অনেকদিন ব্যবহারে ব্রণের পরিমান বেড়ে যায় ।
ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়: কিছু নিয়ম অবলম্বন করলেই ব্রণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। অনেকের ধারণা, কোনো বিশেষ খাবার খেলেই ব্রণ হয়ে থাকে। আসলে এটি ঠিক নয়। কোনো খাবার খেলে যদি ব্রণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে সে খাবারটি বাদ দিতে হবে। তবে প্রচুর ফলমূল ও পানি খেতে হবে। মুখে বেশি ব্রণ থাকলে রাসায়নিক কোনো উপাদান বা কসমেটিক ব্যবহার করা ঠিক নয়, যথাসম্ভব প্রাকৃতিক বা হারবাল জিনিস ব্যবহার করা ভালো কারণ এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বেশির ভাগ ব্রণ নিজস্ব পরীক্ষার মাধ্যমে সেরে ফেলা সম্ভব।
ব্রণ হলে করণীয়:
# দিনে দুই-তিনবার হালকা সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোবেন।
# ব্রণে হাত লাগাবেন না।
# তেল ছাড়া অর্থাৎ ওয়াটার বেসড মেকআপ ব্যবহার করবেন।
# মাথা খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
# পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং নিজের জন্য আলাদা তোয়ালে রাখুন।
# রাতে ঠিকমতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
# মানসিক চাপ পরিহার করুন।
# প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি খান ও প্রচুর পানি পান করুন।
# কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা দূর করতে হবে।
# ঝাল-মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
# পুষ্টিহীনতায় ভুগলে প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
# ব্রণ হলে কী করবেন না:
# রোদে বেরুবেন না, রৌদ্র এড়িয়ে চলুন।
# তেলযুক্ত ক্রিম বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না।
# ব্রণে হাত লাগাবেন না। ব্রণ খুঁটবেন না।
# চুলে এমনভাবে তেল দেবেন না যাতে মুখটাও তেলতেলে হয়ে যায়।
# ব্রণ হলে একেবারেই আচার খাবেন না। তবে মিষ্টি চাটনি খেতে পারেন।
# বেশি পরিমাণে নিরামিষ খাবার খান। আমিষ খাবার যতটা সম্ভব না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
# ডেইরি প্রোডাক্টসের মধ্যে হরমোনাল উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে বলে তা খুব সহজে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ
# কারণেই পনির, দুধ এবং দই কম খান।
# কোল ড্রিঙ্কস খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিন।
# আয়ুর্বেদের মতে অতিরিক্ত ক্রোধের ফলে শরীরে পিত্ত সঞ্চিত হয়। তাই ক্রোধ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন।
পূর্ববর্তী পোস্ট