যশোরের চৌগাছায় পুলিশের বিরুদ্ধে ফের ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের স্বর্ণপট্টিতে সেনকো জুয়েলার্সের মালিক রবিন সেনের ছেলে রাজন সেন ওরফে বাপ্পিকে (২৫) ইয়াবা দিয়ে পুলিশ ফাঁসানোর চেষ্টা করে।
এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের ঘিরে ধরে প্রতিবাদ করে এবং এক এসআইকে আটকে রাখে। এ ঘটনায় চৌগাছা বাজার বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতিতি শান্ত রাখতে এসআই কামরুজ্জামানসহ দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে স্বর্ণপট্টিতে সেনকো জুয়েলার্সের মালিক রবিন সেনের ছেলে রাজন সেন ওরফে বাপ্পির কাছে ইয়াবা ট্যাবলেট আছে বলে দোকান থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করে চৌগাছা থানার এসআই কামরুজ্জামান, এএসআই আকবর ও কনস্টেবল নাজমুল।
ওই সময় চৌগাছা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি ইবাদত হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক আজিজুর রহমানের উপস্থিতিতে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এসআই কামরুজ্জামান নিজের পিস্তল বের করেন।
এ সময় উত্তেজিত ব্যবসায়ীরা দোকানের গেট বন্ধ করে এসআই কামরুজ্জামানকে আটকে ফেলেন। অন্য দুই পুলিশ এএসআই আকবর এবং কনস্টেবল নাজমুল কোনোক্রমে দোকান থেকে বের হয়ে পালিয়ে যান।
ঘটনা শুনে বাজারের শত-শত ব্যবসায়ী ওই দোকান ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল ও চৌগাছা থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিনের সহযোগিতায় এসআই কামরুজ্জামানকে উদ্ধার করে চৌগাছা থানায় নেয়া হয়।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের দোকান বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে বেলা ২টার সময় চৌগাছা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বাজারে মাইকিং করে চৌগাছা থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিনসহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এসআই কামরুজ্জামান, এএসআই আকবর এবং কনস্টেবল নাজমুলকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত বাজারের সকল দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।
চৌগাছা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি ইবাদত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, চৌগাছা থানার ওসিসহ ঘটনায় সম্পৃক্তদের প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত চৌগাছা বাজার বন্ধ থাকবে।
যশোর-ক সার্কেলের এএসপি শেখ নাঈমুর রহমান বলেন, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে চৌগাছার স্বর্ণপট্টির ঘটনা তিনি শুনেছেন।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, অন্য একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে কনস্টেবল নাজমুলকে ক্লোজড করা হয়েছে। স্বর্ণপট্টির ঘটনায় এসআই কামরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ব্যবসায়ী সমিতির দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে ২০১৬ সালে চৌগাছা বাজারের আরেক ব্যবসায়ীকে দোকানের মধ্যে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনা সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ায় এসআই সিরাজসহ দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৭ সালেও উপজেলার খড়িঞ্চা বাজারে ফেনসিডিল দিয়ে এক ব্যক্তিকে ফাঁসানোর ঘটনায় স্থানীয়দের দাবিতে তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।