জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে আর্থ-সামাজিক ও সংস্কৃতিসহ অনেক খাতে বাংলাদেশের অর্জিত অগ্রগতির প্রশংসা করেছে।
১৮ জন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত এই কমিটি বাংলাদেশের প্রাথমিক কান্ট্রি রিপোর্টের ওপর সমাপনী পর্যবেক্ষণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি প্রদান করে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ১৫ ও ১৬ মার্চ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত অধিকার সম্পর্কিত এই কমিটির দু’দিনের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিমন্ত্রী রিপোর্টের ওপর কমিটির বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
জেনেভায় ২৯ মার্চ এই কমিটির ২৮তম বৈঠকে সমাপনী পর্যবেক্ষণ গৃহীত হয়। এতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুপারিশও রয়েছে।
সমাপনী মন্তব্যে কমিটি প্রতিবেদনকে স্বাগত জানায় এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাণবন্ত ও গঠনমূলক সংলাপের প্রশংসা করে। অধিকার কমিটি আর্থ-সামাজিক খাতের সর্বস্তরে লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অর্জিত বিশাল অর্জনের কথা উল্লেখ করে।
কমিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণে সংবিধানের ১৭তম সংশোধনীর প্রশংসা করে।
কমিটির পর্যবেক্ষণ নোটে বাংলাদেশের দারিদ্র্য হ্রাস ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির অনন্য সাফল্যের কথা লিপিবদ্ধ করা হয়। ২০০৬ হতে ২০১৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৩৮.৪ শতাংশ থেকে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মাথাপিছু আয় এবং গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭১.৬ বছর।
এতে প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ ভর্তি লিঙ্গ সমতার প্রশংসা করে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথযাত্রায় স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের আসন্ন উত্তরণের কথাও নোট করা হয়।
কমিটি বাংলাদেশের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড ও ক্লাইমেট চেঞ্জ রেসিলিয়েন্স ফান্ড গঠন এবং এ্যাডপসন অব দ্য বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রেটেজি এ্যান্ড এ্যাকশন প্লান অব ২০০৯-কে স্বাগত জানায়। তবে এসব পরিকল্পনা ও কৌশলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।
জাতিসংঘের এই অধিকার কমিটি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে। কমিটি একথাও বলেছে যে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ প্রভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।
কমিটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী করার সুপারিশ করে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থায়ন এবং নিজস্ব স্টাফ নিয়োগে কমিশনকে সক্ষম করার সুপারিশ করা হয়।
আয় বৈষম্য নিরসনে পর্যাপ্ত সম্পদ বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি মোকাবেলায় আয় বণ্টনের প্রভাব সম্প্রসারণ, করভিত্তি বাড়ানো, কর সংগ্রহের উন্নয়ন এবং সংশোধিত ভ্যাট খাদ্যদ্রব্য ও সেবা খাতে প্রয়োগ না করতে স্বচ্ছতা বিধানের সুপারিশ করা হয়। এতে বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা, গৃহায়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতসহ সমাজসেবা খাতে অর্থায়ন বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়।
কমিটি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের সুপারিশ করেছে। কমিটি দুর্নীতির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির সুপারিশ করেছে।