মোঃ রাসেল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি:যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার সীমান্ত ঘেষা ইছামতি নদীর তীরে ভারতের তেরঘর নামে একটি গ্রাম। তেরটি পরিবারের বসবাসের নামনুসারে নাম হয়েছে তেরঘর। ভারতের কালীয়ানী সীমান্তের পুর্বপাশে ইছামতি নদী। ইছামতি নদীর বাংলাদেশ অংশের গাতিপাড়া সীমান্তের পাশে সামান্য একটি অংশ ভারতের সীট মহল। সেখানে বাংলাদেশের আর ১০ টি পরিবারের মত পাশেই বসবাস করে তেরঘরের বাসিন্দারা।
অপরিচিত কারো দেখে বোঝার উপায় নাই এটা বাংলাদেশের লোকের পরিবার না ভারতের পরিবার। ভারতের লোকের আগ্রহ কম থাকলে তেরঘর গ্রাম দেখতে বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে দুর দুরান্ত থেকে অনেকেই আসেন। এখানে বর্তমানে ৪৫ জন লোকের বসবাস। আগে তেরঘরে ১৩ টি পরিবার ছিল। বর্তমানে এখানে ৯ টি পরিবার বসবাস করে।
জীবন জীবিকার জন্য এরা আগে অনেকটা নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশের উপর। কারন এরা ইছামতি নদী পার হয়ে ভারতের বনগাঁও শহর থেকে বিভিন্ন ধরনের পন্য এনে বাংলাদেশের ভিতর বিক্রি করত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। এসব পন্যর ভিতর ফল, পিয়াজ, চিনি, চা-পাতা, শাড়ী থ্রি-পিস, শাল চাদর, জুতা, কেটস, জিরা, মসলা, আসতবাজি সহ নানা ধরনের পন্য। সুযোগ সুবিধা বুঝে মাদক দ্রব্য ও এরা বিক্রি করে থাকত বাংলাদেশী ব্যবসায়িদের কাছে।
সম্প্রতি বেনাপোল সীমান্তের ৮ কিলোমিটার ফ্রি ক্রাইম জোন হিসাবে ঘোষনা হওয়ার পর প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারনে এরা এসব পন্য বাংলাদেশে পাচার করতে পারছে না।
তেরঘরের ৯ টি পরিবারের ভিতর ২০ থেকে ২২ জন ছেলে মেয়ে স্কুল কলেজে যায় বলে জানান গ্রামের কৌসুল্যা হালদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভিতর বসবাস করে ও আমাদের প্রায় ৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্কুল কলেজ এবং বাজারের জন্য যেতে হয় বনগাঁও কালিনি শহরে। তা ছাড়া রাস্তা ঘাট না থাকায় সারাবছর নৌকায় পার হয়ে তাদের তারপর ওপার যেয়ে সমস্থ প্রকার বাজার ঘাট ঔষধপত্র ডাক্তার কবিরাজ দেখাতে হয়। এ এক দুর্বসহ জীবন। এক সময় অন্তত বাংলাদেশের বাজার থেকে সুযোগ সুবিধা মত বাজার করে এনে খেতাম। বর্তামানে সীমান্তে ব্যপাক কড়াকাড়ির কারনে যেতে হয় তাদের ৬ কিলোমিটার দুরে বনগাঁও শহরে।
তাদের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানায়, এক সময় ভারতের বাজার থেকে নৌাকায় করে পন্য এনে আমরা বাংলাদেশের বাজারসহ বাংলাদেশী লোক এসে আমাদের বাড়ি থেকে ক্রয় করে নিয়ে যেত। এসব পন্য তারা বিক্রি করে যা মুনাফা পেত তা দিয়ে তাদের সংসার ছেলেমেয়েদের খরছ চলে যেত। এখান থেকে ৪ টি পরিবার দেশের ভিতর জমি ক্রয় করে চলে গেছে। আমরা অভাব অনটনের সংসারে জমি ক্রয় করতে পারছি না। আবার এটা বিক্রি করতে ও পারছি না।
তিনি বলেন, আগে ভালো রান্না হলে ও আমরা বাংলাদেশী প্রতিবেশীদের বাড়ি দিতাম অথবা ভালো সম্পর্কের কারনে দাওয়াত করে খাওয়াতাম। অনুরুপ তারা ও করত। বর্তমানে সীমান্তে ব্যপক কড়াকড়ি আরোপের জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে আমরা ইছামতি নদীতে গোসল করতে ও পারি না।
তিনি বলেন, সবথেকে বেশী অসুবিধা সামান্য বাজারের জন্য যেতে হয় নৌকা পার হয়ে ওপারে। একই ভুখন্ড তারপর ও আমাদের দুরত্ব অনেক।
টহলরত বিজিবি সদস্যরা জানায়, একই ভুখন্ড বোঝার কোন উপায় নাই এরা বাংলাদেশী না ভারতীয়। তারপর ওরা ভারতীয় এটা বোঝার জন্য বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকার কাউকে বাংলাদেশের দোকানে লবনের জন্য ও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
তেরঘরের শুশিল বলেন, এখন জীবিকার জন্য তাদের ইছামতি নদীকে বেঁচে নিতে হচ্ছে। সারাদিন এ নদীতে মাছ ধরে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। তিনি বলেন, সরকার যদি রেশনের ব্যবস্থা না করত তাহলে আমাদের অনাহারে মারা যেতে হত।
তেরঘরের সকলের বাড়ি টিনের টালির দেখে কোন বাড়ি পাকা নেই কেন এ প্রশ্নে বিজিবি জানায়, ওদের এখানে বিল্ডিং তোলা নিশেধ। কারন এটা একেবারে বাংলাদেশের ভিতর। তারপর ও ভারতের অংশে ঐ জমিটুকু পড়েছে।