নাটকের কোনও কমতি থাকলো না সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমে যা ঘটল, তা ফুটবল ইতিহাসেই বিরল ঘটনা। ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে নতুন রূপকথায় জন্ম দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা জুভেন্টাসের বুকে ছুরি বসালো এক পেনাল্টি। যে পেনাল্টি থেকে গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে তুলে দিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।
ম্যাচটি হেরেছে রিয়াল ৩-১ গোলে। তবে প্রথম লেগ ৩-০ গোলে জেতায় দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ অগ্রগামিতায় শেষ চার নিশ্চিত করেছে জিনেদিন জিদানের দল। তাই দাপুটে ফুটবলে অসম্ভবকে সম্ভব করার যে উদাহরণ তৈরি করতে যাচ্ছিল জুভেন্টাস, তা আর হলো না। ঘরের মাঠে বড় হারের ধাক্কা কাটিয়ে বার্নাব্যুর দ্বিতীয় লেগে বুক চিতিয়ে লড়াই করেও যাওয়া হলো না তাদের সেমিফাইনালে।
গোটা ম্যাচ জুড়েই ছিল উত্তেজনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে। জুভেন্টাস ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকায় ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াচ্ছিল বলেই মনে হওয়ার কথা সবার। কিন্তু ওই সময় জুভেন্টাসের ছোট বক্সের ভেতর লুকাস ভাসকেস পড়ে গেলে রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, জুভ ডিফেন্ডার মেদহি বেনাটিয়া হালকা ধাক্কা দিয়েছিলেন ভাসকেসকে, একই সঙ্গে পা-ও চালিয়েছিলেন স্প্যানিশ উইঙ্গারের সামনে দিয়ে। ভাসকেস একেবারে গোলমুখের সামনে ফাঁকায় থাকার কারণেই হয়তো পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
ওই মুহূর্তে যা হওয়ার তা-ই হলো। জুভেন্টাস খেলোয়াড়দের অভিযোগ করার সময় উত্তেজিত বুফনকে সরাসরি লাল কার্ড দেখে ছাড়তে হয় মাঠ। নতুন গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে নামা ওইচিচ শেজনির হাতে ছিল ইতালিয়ান ক্লাবটির সব স্বপ্ন। বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদের কোটি ভক্তের আশা নিয়ে স্পট কিকের সামনে রোনালদো। চ্যাম্পিয়নস লিগে ফর্মের তুঙ্গে থাকা পতুর্গিজ যুবরাজ জিতে গেলেন কঠিন এই পরীক্ষা। তিনি বল জালে জড়ানোর সঙ্গে উৎসবে মাতোয়ারা বার্নাব্যুর গ্যালারি।
এই পেনাল্টির আগে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগটা ছিল জুভেন্টাসময়। কঠিন মিশনে শুরুতেই ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। নড়েচড়ে বসার আগেই গোল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে স্তব্দ করে রিয়ালের জালে বল জড়িয়ে দেন মারিও মানজুকিচ। ম্যাচের বয়স তখন মোটে ২ মিনিট। শুরুতেই গোল করে আত্মবিশ্বাসের পারদ আকাশ স্পর্শ করে জুভেন্টাসের। রিয়ালেরই সাবেক খেলোয়াড় সামি খেদিরার চমৎকার চিপ ছোট বক্সের ভেতর থেকে দুর্দান্ত এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন মানজুকিচ।
ক্রোয়েট এই ফরোয়ার্ডের মাথাতেই আবারও সর্বনাশ রিয়ালের। দ্বিতীয় গোলটাও যে তারই এবং সেই হেড থেকে। ৩৭তম মিনিটের গোলটি ছিল আরও চমৎকার। স্টেফান লিচেনস্টেইনারের ক্রস থেকে করা মানজুকিচের হেড একেবারে পোস্ট ঘেঁষে জড়িয়ে যায় জালে। রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস ঝাঁপিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি।
এই নাভাসের ভুলেই ৬১ মিনিটে রিয়াল হজম করে তৃতীয় গোল। দগলাস কোস্তার দূরপাল্লার শট গ্রিপে জড়াতে পারেনি তিনি, হাত থেকে বল ছুটে যায়। কোস্টারিকান গোলরক্ষকের সামনেই থাকা মাতুইদির পায়ে ছোঁয়া লেগে বল যায় বেরিয়ে। এরপর ফাঁকা জালে বড় জড়াতে কোন অসুবিধাই হয়নি ফরাসি মিডফিল্ডারের।
এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরও শেষরক্ষা হয়নি জুভেন্টাসের। হেরেও জিতে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। যাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপার পথে ‘লস ব্লাঙ্কোস’ ফেলল বড় ধাপ।