দেশে ও দেশের বাইরে সকল বাঙালিকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৪২৫ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “এই নতুন বছর আমাদের জন্য শুভ ফল নিয়ে আসুক, যেন বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসাবে গড়তে পারি।”
‘শুভ নববর্ষ’ বলে সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান সরকারপ্রধান। গানে আর আপ্যায়নে উৎসবের আমেজে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন।
বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করে তার মেয়ে বলেন, “আমরা বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র এই বাংলাদেশ।… আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, বাংলা ভাষায় চিন্তা করি, বাংলা ভাষায় আমরা হাসি, বাংলা ভাষায় আমরা কাঁদি।”
পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা করে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব; এটাই নববর্ষে আমাদের প্রতিজ্ঞা।”
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে পারে- তেমন ‘অপশক্তি’ যেন আর কখনো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে না পরে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে কখনো যেন আর এই ধরনের অশুভ শক্তি না আসে, যারা আমাদের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত করবে, ভাষার ওপর আঘাত করবে, সংস্কৃতির ওপর আঘাত করবে, আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত করবে।”
বঙ্গাব্দ ১৪০০ উদযাপনে তখনকার ক্ষমতাসীনদের বাধার ঘটনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৩ সালে বাংলা নতুন শতাব্দীকে বরণ করে নিতে একটি কর্মসূচি ঘোষেণা করা হয়েছিল, কবি সুফিয়া কামালকে প্রধান করে জাতীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তখন ক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া। তার দল বিএনপি সে সময় ওই আয়োজনে বাধা দেয়, বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে ‘ধর্মীয় আবরণ’ দেওয়ার চেষ্টা করে।
“১৪০০ সালে যে এরকম বাধা আসবে; আমরা তা ভাবতেও পারিনি।… মূল অনুষ্ঠান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার কথা, খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা ঢুকতে পারব না। বাঙালি তো বাধা মানে না। সকল বাধা উপেক্ষা করে কবি সুফিয়া কামালকে নিয়ে ঢুকে আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই উৎসব পালন করেছিলাম।”
সেই সময়ের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ একটা ভিন্নখানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছিল। এমনকি পরাজিত শক্তি, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দকল করেছিল, তাদের একটা প্রচেষ্টা ছিল, যেন বাংলাদেশ তাদের আদর্শে গড়ে ওঠে।”
রবীন্দ্রনাথের ১৪০০ সাল কবিতাটির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিএনপির দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, “তারা না বোঝে রবীন্দ্রনাথ, না বোঝে নজরুল ইসলাম। তাদের মনে তো শুধু পেয়ারে পাকিস্তান।”
বৈশাখের প্রথম দিন বর্ষবরণের এই উৎসবের সার্বজনীন চরিত্রের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
“এই উৎসবটা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একত্রে উদযাপন করে। আসলে বাংলা নববর্ষ বাঙালিদের জন্য। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান- সকলে সমানভাবে এটা উদযাপন করে। পুরনো বছরের সমস্ত হিসাব নিকাশ সম্পন্ন করে নতুনভাবে আবার ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা, হালখাতা খোলা, নতুনভাবে আবার যাত্রা শুরু করা; এটাই ছিল একটা ঐতিহ্য”
গত বছর থেকে পহেলা বৈশাখে উৎসব ভাতা চালু করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ‘সকলে’ এই উৎসব উদযাপন করে।
নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে এলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। বক্তৃতার পরে প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত অতিথিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এ অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়িত করা হয় বাঙালির উৎসবের খাবার জিলাপি, লাড্ডু, খই, মুড়ি, বাতাসা আর মিষ্টান্নে।