আসাদুজ্জামান: স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী মাশহুদা সুলতানাকে হত্যার দায়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র স্বামী আবদুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাস কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। আসামি আব্দুল কুদ্দুস এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সাজা প্রাপ্ত আসামি আব্দুল কুদ্দুস (২৫) খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রকিন্ঠপুর গ্রামের মৃত মহিউদ্দীন সরদারের ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের মৃত শাহসূফী আহম্মদ মাও. মোঃ এলাহি বক্সের মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্রী মাসহুদা সুলতানা ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র আব্দুল কুদ্দুস ২০১২ সালের প্রথম দিকে দুইজন দুজনকে ভালাবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী আব্দুল কুদ্দুস অন্য আর একটি মেয়ের সাথে প্রেম ঘটিত ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েন। স্বামীর এই অনৈতিক কর্মকান্ডে তার স্ত্রী প্রায়ই বাধা দিতেন। এক পর্যায়ে ২০১২ সালেরর ২২ জুন রাতে আব্দুল কুদ্দুস তার শ্বশুর বাড়ি সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের পীর বাড়িতে বেড়াতে এসে স্ত্রী মাসহুদার সাথে এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় আব্দুল কুদ্দসের শ্বাশুড়ি তার মেয়েকে নিয়ে আলাদা রুমে ঘুমাতে যান। গভীর রাতে আব্দুল কুদ্দুস তার স্ত্রীকে মোবাইলে তার রুমে ডেকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন অবস্থায় ওড়না ও গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ভোরে তিনি ফজরের নামাজ আদায়ের কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সকালে ঘাতক কুদ্দুস সাতক্ষীরা সদর থানায় আত্মসমর্পণ করে পুলিশকে জানান তিনি তার স্ত্রী মাশহুদাকে হত্যা করেছেন। কুদ্দুস পরে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেন।
নিহত মাসহুদার চাচা আব্দুল্লাহিল গালিব বাদী হয়ে আসামী আব্দুল কুদ্দুসের নামে সদর থানায় ওই দিনই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হাসান ওই বছরের ১৫ আগষ্ট দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামীর নামে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
মামলার নথি ও ১২ জন স্বাক্ষীর জবানবন্দি দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে বিচারক আজ বুধবার দুপুরে এ মামলার আসামী আব্দুল কুদ্দুসকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাস কারাদ্বন্ড প্রদান করেন।
এ মামলায় আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. আবু বক্কর ছিদ্দিক। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাবেক পিপি এড. এসএম হায়দার আলী ও এপিপি এড. দাশ কার্ত্তিক চন্দ্র।
পূর্ববর্তী পোস্ট