আত্মীয়স্বজনের নামে মূল্যবান সম্পদ কেনার তালিকা বেশ দীর্ঘ * ভাগ্নে পিএসআই নোমানের নামে কাকরাইলে বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট, ছোট ভাইয়ের নামে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন বেইলি রিজে * নামে-বেনামে গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাটের ছড়াছড়ি, অসংখ্য বান্ধবীকেও দিয়েছেন দু’হাত ভরে
অনলাইন ডেস্ক: ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি মিজানুর রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে আগেই নোটিশ দেয়া হয়েছিল। দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী গত ২৪ এপ্রিল এই নোটিশ দেন।
মিজানকে তলবের চিঠি দুদক থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর পাঠানো হয়।
অঢেল সম্পদ:
নাম মিজানুর রহমান। চাকরি করেন পুলিশের ডিআইজি পদে। কিন্তু থাকেন রাজার হালে। মূল্যবান সম্পদের দীর্ঘ তালিকা এমনটিই জানান দিচ্ছে। যেন কী নেই তার।
এখন পর্যন্ত তথ্যানুসন্ধানে নিশ্চিতভাবে যা বেরিয়ে এসেছে তাতে পিলে চমকানোর অবস্থা। অবশ্য অতি সৌভাগ্যবান পুলিশের এ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এখন দেশে-বিদেশে প্রায় সবার কাছে বিশেষ পরিচিত মুখ।
দুর্নীতি দমন কমিশন আজ তাকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে তিনি একটি নিউজ চ্যানেলের এক সংবাদপাঠিকাসহ একাধিক নারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন।
তবে সুচতুর মিজানুর রহমান নিজের নামে তেমন কোনো সম্পদ করেননি। কিনেছেন নিকটতম আত্মীয়স্বজনের নামে। অবশ্য দুদকের তদন্তে তারাও ফেঁসে যাবেন। কারণ সামান্য বেতনের চাকরি আর ছোটখাটো ব্যবসায়ী হয়ে দামি ফ্ল্যাটের মালিক কিভাবে হলেন সে প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতেই হবে। এছাড়া মূল্যবান সম্পত্তি পানির দরে কিনলেন কিভাবে তার জবাবও পেতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে অর্থের জোগানদাতা ডিআইজি মিজানের নাম-ধামসহ বিস্তারিত তথ্য তাদের মুখ দিয়েই বেরিয়ে আসবে।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ডিএমপির কোতোয়ালি থানার শিক্ষানবিস এসআই (পিএসআই) মাহমুদুল হাসান নোমান ডিআইজি মিজানুর রহমানের আপন ভাগ্নে। তিনি সেগুনবাগিচার জাতীয় রাজস্ব ভবনের উল্টোদিকে পাইওনিয়ার রোডের ৬৩/১ ‘নির্মাণ সামাদ ট্রেড সেন্টার’ নামে বাণিজ্যিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১৯১৯ বর্গফুটের বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কিনেছেন। দলিল দস্তাবেজে মূল্যবান এই বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের জমিসহ দাম দেখানো হয়েছে ৫৯ লাখ ৯ হাজার টাকা।
২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকার সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিল সম্পন্ন হয়। দলিল নং ১৩১। তবে নির্মাণ সামাদ ট্রেড সেন্টারের ফ্ল্যাট মালিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও জনৈক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই ভবনে প্রতি বর্গফুট স্পেসের দাম কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা।
এ হিসেবে পিএসআই (শিক্ষানবিস এসআই) নোমানের নামে কেনা বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের দাম হয় ২ কোটি ৮৭ লাখ ৮ হাজার ৫শ’ টাকা। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি ৯০ হাজার টাকায় ভাড়ায় নিয়ে একজন ব্যবসায়ী ‘কিসমত রেস্টুরেন্ট ও পার্টি সেন্টার’ পরিচালনা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিএসআই নোমান সম্প্রতি চাকরিও পেয়েছেন মামা মিজানুর রহমানের তদবিরে। তার দাপটে ডিএমপির অনেক কর্মকর্তাই তটস্থ থাকেন। নোমানের পিতা আকতার হোসেন মেহেন্দীগঞ্জের মাদারতলী মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ঢাকায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ এই পরিবারের নেই। কাকরাইলে ফ্ল্যাটের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুল হাসান নোমান এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি।
দুর্নীতি দমন কমিশন ডিআইজি মিজানের সম্পদের হিসাব চাইলে পিএসআই নোমান ফ্ল্যাটটি কম দামে দ্রুত বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। মেহেন্দীগঞ্জের একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদ বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটটি পেছনের তারিখে কিনে নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এমনকি ডিআইজি মিজান ও ভাগ্নে নোমানকে দুদকের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতেও দৌড়ঝাঁপ করছেন বলেও জানা গেছে।
নির্মাণ সামাদ মালিক সমিতির আরেক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান নোমানের নামে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশন করা হলেও এর মালিক মূলত ডিআইজি মিজানুর রহমান। এছাড়া একজন এসআই কিভাবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মূল্যবান বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কিনতে পারেন সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। অবশ্য ফ্ল্যাট মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আশপাশ এলাকার সবাই জানেন এটি ডিআইজি মিজানের ফ্ল্যাট।’
এদিকে এ বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় ভাড়াটিয়ার সঙ্গে করা চুক্তিনামায়। ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে করা ওই চুক্তিনামায় এসআই মাহমুদুল হাসান নোমান ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ বছরের জন্য ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন। ডিআইজি মিজানের এই ভাগ্নে আলাদা বাসা নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। অথচ চুক্তিনামায় বর্তমান ঠিকানা হিসেবে বেইলি রোডের ‘বেইলি রিজ’ নামে বহুতল আবাসিক ভবনের এম-৪ ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়েছেন। কারণ ডিআইজি মিজান বিলাসবহুল এই ফ্ল্যাটেই থাকেন। কাকরাইলের ওই ভবনের নিচতলায় আরেকটি জুসের দোকান দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজানের বিশ্বস্ত সাবেক গাড়িচালক গিয়াস উদ্দিন। দোকানটিও ডিআইজি মিজানের দোকান হিসেবে পরিচিত ছিল। ডিআইজি মিজানের দীর্ঘদিনের গাড়িচালক এই গিয়াস ও সাবেক বডিগার্ড কনসটেবল জাহাঙ্গীর কোটিপতি হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে পরিচিত।
জানা যায়, বেইলি রোডের বেইলি রিজ আবাসিক ভবনের এম-৪ নং ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রেশন করা হয় ডিআইজি মিজানুর রহমানের একমাত্র ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপনের নামে। তিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ হাসপাতাল রোডে ‘আকবর মেডিকেল হল’ নামে ছোটখাটো ফার্মেসি পরিচালনা করেন। এই ব্যবসা দেখিয়ে ঢাকায় আয়কর ফাইলও খুলেছেন তিনি। বিভিন্ন কৌশলে এই ট্যাক্স ফাইলে নিজেকে কোটিপতির বর্ণনা দিয়েছেন স্বপন। বেইলি রিজের অ্যাপার্টমেন্টে বিলাসবহুল ওই ফ্ল্যাটগুলো প্রতিবর্গ ফুট ১৫ হাজার টাকা বলে জানিয়েছেন একজন বাসিন্দা। সেই হিসেবে ২৪শ’ বর্গফুটের আলিশান ওই ফ্ল্যাটের দাম হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অথচ জমির মূল্যসহ ফ্ল্যাটের সাবকবলা দলিলে দাম দেখানো হয়েছে ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ২০১৬ সালের ১৯ জুন ঢাকার সদর সাবরেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলাম ডিআইজি মিজানুর রহমানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ওরফে স্বপনের নামে সাবকবলা দলিলে স্বাক্ষর করেন। দলিল নং ৪২৭৭।
অন্যদিকে মাহবুবুর রহমান স্বপন ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে দাখিলকৃত আয়কর ফরমে ব্যবসায় মূলধন দেখিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। এ রকম পুঁজির ব্যবসা থেকে নিজের নামে বেইলি রোডে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনা অস্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও আয়কর ফাইলে তিনি ফ্ল্যাটটি সংযুক্ত করেন। সেখানে আলিশান ওই ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয় ৫৫ লাখ ৫১ হাজার ৮৪০ টাকা। আয়করের হিসাবে তিনি একটি গাড়িরও মালিক ছিলেন। ঢাকা মেট্রো-গ-২৩-২১৮১ নং দামি মডেলের গাড়িটি বিক্রি করে তথ্য দিয়েছেন। তবে বিআরটিএর হালনাগাদ ফাইলে এখনও গাড়িটি মাহবুবুর রহমানের নামেই রয়েছে। এছাড়া মাহবুবুর রহমানের নামে এফডিআর আছে ২৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮ টাকা। এছাড়া মেহেন্দীগঞ্জে তিনি মাত্র ২০ ডেসিমিল জমির মালিক। এর দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান স্বপন বলেন, ‘বৈধ আয় দিয়েই সম্পদ করা হয়েছে। সবকিছু আয়কর রিটার্নে দেখানো আছে।’
উত্তরায় ১৩নং সেক্টরে ৮নং রোডে ২৯নং বাড়ির ফ্ল্যাটে এক ছেলে নিয়ে থাকেন ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলীয়া আনার রত্না। তিনি গুলশান পুলিশ প্লাজা মার্কেটে লেবেল ৩-এ ৩১৪নং ‘লেডিস মার্ট’ শোরুম পরিচালনা করেন। মিজানুর রহমানের দীর্ঘদিনের সহযোগী ড্রাইভার গিয়াস উদ্দিনের ছোট ভাই আলমগীরকে ওই শোরুমে বিক্রয়কর্মী হিসেবে দেখা যায়। দেশের বাইরে থেকে এই শোরুমে থ্রিপিসসহ আধুনিক ড্রেস আনা হয়।
ডিআইজি মিজানুর রহমানের বড় ছেলে কানাডার একটি ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। সেখানে ছেলের নামে মূল্যবান সম্পদ রাখা হয়েছে বলে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ছোট ছেলেকেও কানাডায় পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান। তার দ্বারা নির্যাতনের শিকার একজন নারী বলেন, ডিআইজি মিজানের বৈধ আয়ের সঙ্গে হিসাব মেলালে অনেক কিছুই স্পষ্ট হবে। কারণ কানাডার মতো দেশে একটি ব্যয়বহুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈধভাবে ছেলে পড়ানোর সুযোগ থাকার কথা নয়। অথচ তিনি পড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ছেলেকে দেখতে যাওয়ার অজুহাতে স্ত্রী রতœাসহ পরিবার পাড়ি জমায় কানাডায়। এর প্রমাণ রয়েছে পাসপোর্টে। কানাডা ছাড়াও স্ত্রী রত্নাসহ প্রায়ই বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।
এসব অভিযোগের বক্তব্য জানতে ডিআইজি মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। সরাসরি বেইলি রোডের বেইলি রিজ ও উত্তরার বাসায় যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু বাড়ি দুটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা বাড়িতে কেউ নেই বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে ডিআইজি মিজানুর রহমানের স্ত্রী সোহেলীয়া আনার রত্না বুধবার বলেন, ‘মিজান সাহেব একটু ব্যস্ত আছেন।’ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো সম্পদ নেই। উত্তরা ফ্ল্যাট আমার নিজের নামে। এই ফ্ল্যাটটি অনেক আগেই নেয়া হয়েছে। পুলিশ প্লাজায় ব্যবসার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, একজন খালাতো বোনকে নিয়ে ওই ব্যবসাটা করছি।’
সূত্র জানায়, পূর্বাচলে সরকারিভাবে ৫ কাঠার জমিও পেয়েছেন ডিআইজি মিজান। সাভারের পুলিশ কলোনিতেও পেয়েছেন ফ্ল্যাট। একটি লেক্সাস হেরিয়ারসহ একাধিক গাড়িতে তিনি ও তার পরিবার নিয়মিত চলাচল করেন।
ডিআইজি মিজানুর রহমানের ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপন ও ভাগ্নে এসআই মাহমুদুল হাসানের কোটিপতি হওয়ার সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জেও যোগাযোগ করা হয়। মেহেন্দীগঞ্জের দুর্গম গ্রাম আলীগঞ্জে গিয়ে কথা হয় সত্তরোর্ধ্ব একজন জেলের সঙ্গে। এক সময় তারা একই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি মিজানুর রহমানের পিতাসহ পরিবারের সবাইকেই দেখেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘এক সময় আমার এবং ডিআইজি মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ছিল পুরাতন হিজলা গ্রামে।
সেই গ্রামের পূর্বপুরুষের বাড়ি নদীভাঙনে সব বিলীন হয়ে যায়। এরপর মেহেন্দীগঞ্জের আলীগঞ্জে সামান্য জমি কিনে বাড়ি করেন মিজানুর রহমানের পিতা মরহুম আলী আকবর মিয়া।’ তিনি বলেন, ‘নদীভাঙনে বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হলে আলী আকবরও আলীগঞ্জে চলে আসেন। গ্রামে তেমন জমিজমা ছিল না তাদের।
আলী আকবর আলীগঞ্জ বাজারে গ্রাম্য চিকিৎসক মাইদুল মিয়ার বাবার সহযোগী ছিলেন। তিনিই নবজীবন ফার্মেসি পরিচালনা করতেন। এক সময় নবজীবন ফার্মেসিতে অংশীদার হন আলী আকবর। মাইদুলের বাবার সঙ্গে থেকেই টুকটাক চিকিৎসাও শেখেন তিনি। এরপর লোকজনের মুখে মুখে ডা. আলী আকবর নামে পরিচিতি পান।’ তিনি বলেন, ‘মাইদুলের বাবার মৃত্যুর পর আলীগঞ্জের সেই নবজীবন নামে ছোট ফার্মেসিটি মিজানুর রহমানের বাবা কিনে নেন। আলী আকবর মারা যাওয়ার পর মিজানুর রহমানের ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান স্বপন ফার্মেসিটি পরিচালনা করতেন।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকে মেধাবী মিজানুর রহমানকে লেখাপড়ায় আর্থিক সহযোগিতা করে তাদের বড় বোন বুলু। ওই সময় তিনি স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। বাবা আলী আকবরের মৃত্যুর পর স্বপন আলীগঞ্জেই থাকতেন। এরপর মেহেন্দীগঞ্জ বাজারের পাশে আম্বিকাপুরে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির পর হাসপাতাল রোডে আরেকটি ফার্মেসি দেন। এসবই হয়েছে ডিআইজি মিজানুর রহমানের চাকরি হওয়ার পর। আলী আকবরের দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে তৃতীয় মিজানুর রহমান। তবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান মিজান ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। ১৯৮২ সালে মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট পিএম স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন স্যার এফ রহমান হলে।
জানা যায়, পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পরই ভাগ্য খুলে যায় মিজানুর রহমানের পুরো পরিবারের। দুই হাতে অর্থ কামিয়ে কয়েক বছর আগে মেহেন্দীগঞ্জ পৌর শহরের পাতারহাট-উলানিয়া সড়কের পাশে কালিকাপুর এলাকায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন বিলাসবহুল অট্টালিকা। ২য় তলাবিশিষ্ট এ বাড়ির নাম দেয়া হয় ‘আমেনা ভিলা’। মেহেন্দীগঞ্জের লোকজনের কাছে ওই বাড়িটি ‘স্বর্ণকমল’ হিসেবে পরিচিত।
মেহেন্দীগঞ্জের একজন সাবেক সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু মেহেন্দীগঞ্জে নয়, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিআইজি মিজান। অবৈধ এ বাণিজ্য করে অগাধ টাকার মালিক হন তিনি।
মেহেন্দীগঞ্জের পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, মেহেন্দীগঞ্জের একজন সন্তান পুলিশের বড় পদে চাকরি করায় এতদিন তাকে নিয়ে গর্ব করতেন স্থানীয় মানুষ। কিন্তু নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ায় এখন সবাই ছি-ছি করছে। এটা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। এটা লজ্জার বিষয়।
জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানের চাকরিজীবনে যাবতীয় আয়-ব্যয়, এনবিআরে দেয়া সম্পদের তথ্য, নারীঘটিত বিষয়ে অর্থ খরচের পেছনে টাকার উৎস, বিদেশে পরিবার-পরিজনের জন্য পাঠানো অর্থসহ পুরো তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।