সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে নিহত দুই ভাই শেখ কামাল এবং শেখ জামালের সেনা বাহিনীতে কাজ করা এবং ছোট ভাই শেখ রাসেলের সেনাবাহিনীতে কাজ করার ইচ্ছার কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ধরে আসে তার।
১৯৯৬ সালে সেনা সদরদপ্তরে গিয়ে তাদের দুপুরে ভাতের দাবি পূরণে উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। জানান, সেনাবাহিনীকে দুপুরে ভাতের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত দুই বছর তিনি নিজেও দুপুরে ভাত খাননি।
রবিবার (১৩ মে) ঢাকা সেনানিবাসে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। কিছুক্ষণ তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। এ সময় সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যেও নেমে আসে নিরবতা।
সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সার্বিক উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।’
‘আর আমি করি এ কারণে যে আমার সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটা পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। আমার ভাই শেখ কামাল মুক্তিযোদ্ধা, সে একজন ক্যাপ্টেন ছিল। আমার দ্বিতীয় ভাই শেখ জামাল সে একজন লেফটেন্যান্ট এবং এমআরএফ থেকে ট্রেইনিং নিয়ে সে সেনাবাহিনীতে যোগ দান করেছিল। এমনকি আমার ছোট ভাই, সে মাত্র ১০ বছরের। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, সে বড় হলে কী হবে, তার একটাই কথা ছিল, সেও সেনাবাহিনীতে যোগদান করবে।’
‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে ১৫ আগস্ট সবাই শাদাহাৎ বরণ করেছে। কিন্তু আমি মনি করে এই পরিবারের সদস্য হিসেবে এই বাহিনীর উন্নয়ন করা আমার একটি কর্তব্য। সেই সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি উন্নত, সমৃদ্ধ হব সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি।’
এটুকু বলার পর প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ কথা বলতে পারেননি। চুপ থাকার পর আবার যখন তিনি বক্তব্য শুরু করেন তখনও তার কণ্ঠ কাঁপছে।
১৯৭৫ সালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে হত্যার দিন খুন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল ও শেখ জামাল এবং দুই ভাইয়ের স্ত্রীকেও। বাদ যায়নি শিশু শেখ রাসেলও।
সেনাবাহিনীর উন্নয়নে তার সরকারের নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। আর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনাতেই এই আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেই নির্দেশনার আলোকেই আমরা (সেনাবাহিনী) গড়ে তুলছি। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, সে কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত হতে পেরেছে।’
ফোর্সেস গোল ২০৩০ অনুসারে পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ গড়ে তোলা, সব ইনফ্রেনট্রি ব্যাটালিয়ানকে প্যারা ব্যাটালিয়ান ও ম্যাকানাইজড ব্যাটালিয়ানেও রূপান্তর, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল বৃদ্ধি, নোয়াখালীর স্বর্ণদীপে সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার সুযোগ তৈরি, সেনা-নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী অফিসার ও সৈনিক পদ সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীকে প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন, আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে এনএলআরএস ও মিসাইল রেজিমেন্ট সংযোজন, অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, মডার্ন ইনফ্রেনট্রি গেজেটসহ সংযোজন করে অপারেশনাল সক্ষমতাকে বৃদ্ধির কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।