পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারখ্যাত গাজা উপত্যকা ও ইসরাইল অধিকৃত জেরুজালেমের মধ্যকার দূরত্ব মাত্র ৭৫ কিলোমিটার।
সোমবার জেরুজালেমে সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যখন মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানছিল, গাজায় তখনও নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ গোনার কাজটি সম্পন্ন হয়নি সম্ভবত।
নিজ ভূমি জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরানোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সেখানে বিক্ষোভে নামা নিরীহ-নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে তাজা গুলি আর গ্রেনেড ছোড়ে ইসরাইলি বাহিনী। এতে লাশে পরিণত হয় ৭০টি তাজা প্রাণ।
টিয়ার গ্যাস আর স্ন্যাইপারের গুলিতে গুরুতর আহত হয় আরও প্রায় ২৭০০ জন। স্বজন হারানোর বেদনায় শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ে গাজার আকাশে-বাতাসে।
সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি জেরুজালেম শহরে মার্কিন কনস্যুলেটে ধাপে ধাপে চলে দূতাবাস উদ্বোধনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে পুরো শহর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়ে মোড়ে মোড়ে টানানো হয়েছে বড় বড় পোস্টার।
সেখানে লেখা, ‘মার্কিন দূতাবাস সরানোয় ট্রাম্প আপনাকে ধন্যবাদ। আপনিই ইহুদি বা জায়নদের প্রকৃত বন্ধু। প্রোজেক্টরে দেখানো হয় ট্রাম্পের ভিডিও।
অন্যদিকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে গাজার ইসরাইলি সীমান্তে তারকাটার বেড়ার বাইরে জড়ো হতে থাকে গাজার অধিবাসীরা। আলজাজিরার প্রতিবেদন মতে, এদিন সীমান্তে জড়ো হয় প্রায় এক লাখ বিক্ষোভকারী। এদের বেশিরভাগ ভূমি হারিয়ে আজ শরণার্থী।
নিজেদের ভূমিতে দূতাবাস সরানোর পদক্ষেপ মেনে নিতে পারেনি তারা। তাই দলে দলে ছুটে যায় সীমান্তের তারকাটার দিকে। কিন্তু নিরীহ-নিরস্ত্র গাজাবাসীকে রেহাই দেয়নি ইসরাইলি বাহিনী।
নির্বিচারে গুলি চালায় বিক্ষোভকারীদের ওপর। যে ইসরায়েলিরা সেই অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিল এতে তারা উল্লাস প্রকাশ করে। তারা এই নিপীড়নের ঘটনা উপভোগ করে। স্লোগান দিয়ে তারা বলতে থাকে, ‘ওদের পুড়িয়ে ফেল, গুলি কর, মেরে ফেল’।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করে একে ‘ঐতিহাসিক’মুহূর্ত বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘কী আনন্দের দিন! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ইতিহাসকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে আপনি ইতিহাস রচনা করেছেন।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হোয়াইট হাউসের দুই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও তার স্ত্রী ইভাঙ্কা।