ন্যাশনাল ডেস্ক: এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পুরনো ও বৃহৎ দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শেষ। এখন অপেক্ষা উদ্বোধনের। জানা গেছে, আসন্ন ২৩ জুন দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে এ অফিস উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন এ অফিস ভবন পরিদর্শন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ সময় তারা ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরে দেখেন এবং নির্মাণসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, আরও সপ্তাহখানেক আগেই মূল ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে শোভাবর্ধনের কাজ। ভবনের সামনে দলের নাম ও প্রতীকও স্থাপন করা হয়েছে। ভেতরের টুকিটাকি সাজগোজের কাজ চলছে এখন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ জানিয়েছেন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ২৩ জুন কার্যালয় উদ্বোধনের সম্ভাব্য দিন ঠিক করা হয়েছে।
ভবনের গায়ে ফুটন্ত ফুলের মতো টেরাকোটায় ফুটে উঠবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। তার পাশেই ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি মনে করিয়ে দেবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সেই দৃশ্য। ভবনের দেয়ালে ভেসে থাকবে বিশ্ব ঐতিহ্যের সেই প্রামাণ্য দলিল, রাজনীতির কবির সেই বজ্রকণ্ঠের উদ্ভাসিত জনস্রোতের চিত্র।
ভবনটির প্রবেশ মুখে দেখা যাবে চলন্ত নৌকা। তার পাশেই দেয়ালে স্মৃতিচিহ্নের মতো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক কালো দিন।ভবনটির একপাশে লেখা থাকবে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অর্জিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, ‘জাতীয়তাবাদ’, ‘গণতন্ত্র’ ও ‘সমাজতন্ত্র’ এই চারমূল নীতির রক্তাক্ত শপথ। ভবনের প্রতিটি তলায় থাকবে ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা চিহ্ন।
আটষট্টি বছর বয়সের এক রাজনৈতিক দলের প্রাণকেন্দ্র এই ভবন। রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের এই ঠিকানায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম শুরু হয় ৩৭ বছর আগে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দেশের ফেরার পর পুরনো ভবনের এই জায়গাটিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করা হয়।
২০১৭ সালের ২৩ জুন দলের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের দলের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন এই ভবনের উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভবনটির প্রবেশমুখের বামপাশে লেখা থাকবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, ‘জাতীয়তাবাদ’, ‘গণতন্ত্র’, ‘সমাজতন্ত্র’- এই চার মূলনীতি। তার পাশে দেয়ালে মাটি অথবা টাইলসে খোঁচিত হবেন নারীনেত্রী আইভী রহমান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিহত হওয়া এই নারীনেত্রীর স্মৃতিচিহ্নই এটি। ভবনে প্রবেশ মুখ থেকে যে দেয়ালটি দেখা যাবে সেখানে বাংলাদেশের মানচিত্র খোঁচিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলের নিজস্ব ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বিশ্বমানের ভবনটি সামনের দু’পাশের দেয়াল কাচ দিয়ে ঘেরা থাকবে। আর মাঝখানে সিরামিকসের ইটের বন্ধনে গড়ে উঠবে। এর সামনের দেয়ালজুড়ে দলের সাইনবোর্ডসহ দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, চার মূলনীতি, ভাষা আন্দোলন’৫২, মুক্তিযুদ্ধ’৭১ প্রভৃতি শব্দ খোদাই করে লেখা থাকবে। ভবনের সামনে-পেছনে হবে ফুলের বাগান।
জানা গেছে, ১০তলা বিশিষ্ট এ ভবনে চার ও পাঁচতলায় থাকবে আওয়ামী লীগের সহযোগী অঙ্গ-সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয়। সাত, আট ও নয়তলায় দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্ষ থাকবে।
ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকবে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম এবং সাংবাদিক লাউঞ্জ। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিতব্য ভবনটিতে থাকবে দুটি স্বতন্ত্র কারপার্কিং, একাধিক লিফট, সিঁড়ি, কারলিফটসহ ভূমিকম্প ও অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। ভবনের ছাদে থাকবে হেলিপ্যাড, যেখানে সরাসরি হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উলআলম হানিফ বলেন, আমরা আশা করছি, ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলীয় সভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভবনটির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।