আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, কাচিনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট-লার্জ (বিশেষ দূত) স্যাম ব্রাউনব্যাক। ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রশ্নের উত্তরে স্যাম ব্রাউনব্যাক বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আরো অবনতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে আরো দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
স্যাম ব্রাউনব্যাক বক্তব্য দেওয়ার আগে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতাকে আরো এগিয়ে নেওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য। এটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আগামী ২৫ ও ২৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ইস্যুতে সমমনা দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানাবে ওয়াশিংটন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিশেষ দূত স্যাম ব্রাউনব্যাক বলেন, তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারে গিয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে দেখা করতে এবং রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাঁকে সফরেরই সুযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসে তিনি রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছেন। তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাঁচজনের মধ্যে চারজনই সরাসরি হত্যাযজ্ঞ দেখার কথা তাঁকে জানিয়েছে। এক রোহিঙ্গা শিশু তার ভাইয়ের হত্যার তথ্য জানিয়েছে।
স্যাম ব্রাউনব্যাক বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে দৃষ্টি রেখেছে। তবে তাদের আরো দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, তাঁর ধর্মীয় স্বাধীনবিষয়ক কার্যালয় বার্ষিক প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের তথ্যগুলো তুলে ধরেছে। এবার এটি সমাধানে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাজ করা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে মিয়ানমারবিষয়ক অনুচ্ছেদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলা হয়েছে, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক বিষয়গুলো প্রায়ই নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। অনেক হামলা-নিপীড়নের ঘটনা শুধু ধর্মীয় কারণেই ঘটেছে—এটি নিরূপণ করাও কঠিন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা, হামলা, হয়রানি ও বৈষম্য অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ব্যাপক মাত্রায়
বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, গণবাস্তুচ্যুত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে রোহিঙ্গা হত্যা-নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য অন্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা উসকানি দিয়েছে। গত অক্টোবর মাসে অমুসলিম একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতা মিয়ানমারের সেনাদের উদ্দেশে বলেন, বৌদ্ধ নয় এমন ধর্মানুসারীদের হত্যা করলে খুব বেশি পাপ হবে না।
প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশেও এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ এসেছে। এতে বলা হয়েছে, উদ্যোগ নেওয়ার পরও বাংলাদেশ সরকার সনাতন ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফতোয়া বন্ধের উদ্যোগও পুরোপুরি কাজে আসেনি।