কলারোয়া প্রতিবেদক: সারাদেশে যখন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে এবং প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলছেন এই অভিযান চলতে থাকবে তখন গুঞ্জনকে সত্য করে কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনা হয়েছে মাদকসেবনের দায়ে অভিযুক্তদের। একই সাথে এসব কমিটি যেমন কোন প্রকার সম্মেলন না করে দেয়া হচ্ছে তেমনি সংশ্লিষ্ট এলাকার আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকেও অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। এর ফলে কার্যত মাদার সংগঠন আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের থেকে জেলার অনেক স্থানেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগ।
উল্লেখ্য, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ- ইদানীং সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগের একের পর এক কমিটি হচ্ছে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে। কোন সম্মেলন ছাড়াই এসব কমিটি হচ্ছে ব্যক্তিগত পছন্দে-অপছন্দে। এরই ধারাবহিকতায় গভীর রাতে ফেসবুকে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে গঠিত হলো কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি।
কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নব গঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাদকাসক্ত। ছবিতে নব গঠিত কমিটির সভাপতি এস.এম আবু সাঈদ ফেন্সিডিল সেবন করছেন। আরেকটি ছবিতে সাধারণ সম্পাদক শাকিল খান জজ ফেন্সিডিলের বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। মন্তব্যে অনেকেই বলছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হয়নি এখনও। এই অন্তবর্তী সময়ের সুযোগ নিয়ে গঠনতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান না দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে সাতক্ষীরায় বিক্রি করা হচ্ছে একের পর এক ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিটের পদ।
শুক্রবার মধ্যরাতে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক তাদের নিজ ফেসবুকে একটি কমিটি প্রকাশ করেছেন। আগামী এক বছরের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট নব গঠিত কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনই মাদকাসক্ত।- বলছেন কলারোয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ অকেনেই।
কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কুিমটির সভাপতি শেখ ইমরান হোসেন জানান, আমি গত ৮ বছর ছাত্রলীগের কলারোয়া উপজেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমার কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। তবে মাদকাসক্তদের দিয়ে কমিটি গৌরবজ্জ্বল ছাত্রলীগের ঐতিহ্য বিলীন করবে।
এদিকে, মাদকসেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য গঠিত কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম আবু সাঈদ বলেন, আমি মাদকের সঙ্গে যুক্ত নই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এক শ্রেণির ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মাদক সেবনরত ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে বলেন, আমি এটা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। আর আমি মাদকের সঙ্গে কোন ভাবেই জড়িত না।
অন্যদিকে, ফেন্সিডিলের বোতল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সদ্য গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাকিল খান জজ বলেন, ছবিটা আমার তবে আমি মাদক সেবন করি না। তবে ছবি আসলো কিভাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সাবেক কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ ইমরান হোসেন একজন চিহ্নিত মাদকসেবী। পূর্বে তার সঙ্গে আমার সখ্যতা ছিলো। একদিন সে এই ছবিটা তুলেছিলো।
এদিকে কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের এমন বিতর্কিত কমিটি নিয়ে সর্বত্র চলছে সমালোচনা। বিষয়টি সকলেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।
কলারোয়া উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন বলেন, এস. এম আবু সাঈদ ও শাকিল খান জজ এলাকায় চিহ্নিত মাদকসেবী। কারা কিভাবে কমিটি দেয় এটি আমার বোধগোম্য নয়। সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কমিটির জন্য মাদার সংগঠন আ.লীগের সঙ্গে সামান্যতম যোগাযোগ করা হয় না। তা ছাড়া আবু সাঈদ ও শাকিল খান জজ এদের আ.লীগের কোন প্রগামেও দেখা যায়নি। জামায়াত-শিবির পরিবারের অন্তভূক্ত এরা। এলাকায় চিহ্নিত মাদকসেবী ও জামায়াত-শিবির পরিবারের সদস্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
এসব বিষয়ে কথা বলতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান সাদিক বলেন, বিষয়টি জেনেছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কেউ বলতে চায় ছবিটি এডিট করা। তবে ঘটনার সত্যতা মিললে কমিটি বাতিল করা হবে।