দেশের খবর: দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুর পঞ্চম স্প্যান আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বসানো হলো। শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা প্রান্তের ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর এই সুপার স্ট্রাকচার বসানো হয়। পঞ্চম স্প্যানটি বসানোর ফলে সেতুর পৌনে এক কিলোমিটার অংশ দৃশ্যমান হলো।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি ক্রেনটি নেওয়া হয়। পরে ক্রেন দিয়ে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপরে স্প্যানটি তোলার কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে স্প্যানটি পুরোপুরি খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল জাজিরার প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে। চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় তৃতীয় এবং গত ১৩ মে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির ওপর চতুর্থ স্প্যান বসানো হয়। ফলে সেতুর ৬০০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়। আজ এর সঙ্গে যোগ হলো ১৫০ মিটার।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির কাছেই পৌঁছে যায় ‘৭এফ’ নম্বর স্প্যানটি। মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার কুমারভোগে অবস্থিত ইয়ার্ডে এটি তৈরি করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপ জেডি থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি প্রায় তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যানটি পাজা করে তুলে নিয়ে যায়। যদিও এটি রওনা হওয়ার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু পদ্মায় অস্বাভাবিক ঢেউ থাকায় জাহাজটি রওনা হয় গতকাল।
এর আগে ৪২ নম্বর খুঁটির ঢালাই সম্পন্ন এবং জমাটবাঁধা নিশ্চিতসহ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। পদ্মায় এখন সেতুর কাজের প্রসার বেড়েছে। এরই মধ্যে ৯টি খুঁটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মাওয়ার ৩, ৪, ৫ এবং জাজিরা প্রান্তের ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটি। এ ছাড়া ১৩ নম্বর খুঁটির কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। এ নদীতে এ পর্যন্ত ১৫০টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। শিগগিরই মাওয়া প্রান্তে স্প্যানের কাজ শুরু হবে।
এই সেতু হবে ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সেতুর ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
সেতুতে সব মিলে ৪২টি খুঁটি থাকবে। ১৫০ মিটার দূরত্বে একেকটি খুঁটি। ৪২টি খুঁটির ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। স্প্যান হলো সেতুর ওপর গাড়ি চলাচলের অংশ।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী গতকাল রাতে জানান, জাজিরায় ৪১ ও ৪২ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতু নদী থেকে শরীয়তপুরের পারে গিয়ে পৌঁছাবে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, স্প্যানগুলো শতভাগ স্টিলের তৈরি। প্রতিটি স্প্যানের ওজন দুই হাজার ৮০০ টন। ওজন ধারণ করে বিশেষ বিয়ারিং। এ বিয়ারিংয়ের ওপর থাকে স্প্যান। বিয়ারিংয়ের কারণে সেতুতে চাপ পড়লে তা কাঁপতে থাকে। সেতুর স্প্যান বসানোর আগে পিলারের মাথায় যে বিয়ারিং বসানো হয়েছে তা বিশ্বে বিরল। ১০ টনের বেশি ওজনের একেকটি বিয়ারিং। রিখটার স্কেলে সাড়ে সাত মাত্রায় ভূমিকম্প হলেও সেতুর ক্ষতি হবে না। পুরো সেতুতে ৯৬টি বিয়ারিং ব্যবহার করা হবে। বিয়ারিং বসানো হয় পিলারের ওপর ও স্প্যানের নিচে।
স্প্যান বসানোর পর স্প্যান জায়ান্ট দেওয়া এবং স্প্যানের ওপর স্লাব বসানো বাকি থাতে। স্লাব বসালেই সড়ক দেখা যাবে স্প্যানের ওপর। তবে এখন পর্যন্ত কোনো স্প্যানের ওপরেই স্লাব বসানো হয়নি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সবশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, ২৭১টি পাইলের মধ্যে ১৫০টি পাইল বসানো হয়েছে। ৪২টি খুঁটিতে ৪১টি স্প্যান বসে গড়ে উঠবে পদ্মা সেতু।