রাজনীতির খবর: নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য গ্রামে-গঞ্জে, ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ সুখে থাকলে দুঃখের কথা ভুলে যায়। তাই উন্নয়নের কথা তাদের কাছে গিয়ে বলতে হবে। দেশের উন্নয়নে ও জনগণের কল্যাণে আমরা যেসব কর্মসূচি নিয়েছি, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরবেন।’ শনিবার (৩০ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ভেতরে সবুজ মাঠে বিশেষ বর্ধিত সভা ২০১৮ দ্বিতীয় পর্যায়ে এই নির্দেশনা দেন তিনি। সেখানে উপস্থিত হয়েছেন চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মহানগরের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
শেখ হাসিনার ভাষ্য, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে হবে। জনসমর্থনও বাড়ানো দরকার। আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। কোনোরকম দলীয় কোন্দল যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলা প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৮১ সালে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে দেশে ফিরে এসে বিশাল পরিবার পেয়েছি। আমার পরিবার আওয়ামী লীগ, এই দলের সহযোগী সংগঠন, বাংলার জনগণ। আমাদের শক্তি আমার সংগঠন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা, বাংলাদেশের গণমানুষ। এজন্য কোনও সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হই না।’
সারাদেশে গৃহহীনদের জন্য সরকার ঘর করে দেওয়ার যে উদ্যোগ হাতে নিয়েছে ও যে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, তা যেন তাদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়, তা খেয়াল রাখতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। একইসঙ্গে বিধবা ও বয়স্কসহ যেসব ভাতা দেওয়া হয় সেগুলোতে যেন অনিয়ম না হয় সেদিকে সজাগ থাকতেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও চেয়ারম্যানদের অনুরোধ করেন তিনি।
মাদকবিরোধী অভিযানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক শুধু একটি জীবন নয়, পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযানে সবার সহযোগিতা চাই। গ্রামে-গঞ্জে সবার কাছে মাদকের কুফল তুলে ধরতে হবে। আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী, দুর্নীতিবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন। দল ভারী করতে গিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষকে দলে না ভিড়িয়ে নতুন নতুন কর্মী সৃষ্টি করতে হবে। আমি বিভিন্ন রিপোর্ট সংগ্রহ করছি। আপনারা আগেও মতামত দিয়েছেন, এগুলো আমি পড়ি। আপনাদের মতামত নিয়েই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
গ্রামীণ উন্নয়নে বাজেটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে বাজেট দিচ্ছি, টাকা-পয়সা ছাড় দিচ্ছি। সেখানে যেন কোনও দুর্নীতি না হয় সে বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিটি টাকা যথাযথভাবে ব্যয়ের মাধ্যমে আপনারা নিজেদের এলাকার উন্নয়ন করবেন, আমি এটাই চাই।’
তৃণমূলের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শেখ হাসিনা। তার কথায়, ‘সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে গ্রেফতারের পর আওয়ামী লীগসহ শিক্ষক সমাজ ও ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ করেছিল। তবুও একটার পর একটা মামলা দিয়েছিল ওই সরকার। কিন্তু তৃণমূল নেতারা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন বলে সেনাসমর্থিত সরকার আমাকে মুক্তি ও নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনে বিরাট বিজয়ের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য দেশের সার্বিক উন্নয়ন। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছি বলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল।’
শনিবারের বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবতহন ও সেতমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেছেন দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জেলা, থানা ও উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং মেয়র ও পৌর মেয়রদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সবার প্রথম পর্যায় অনুষ্ঠিত হয়। বাকি চার বিভাগের (ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মহানগরের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে পরবর্তী বিশেষ বর্ধিত সভা হবে আগামী ৭ জুলাই।