বিদেশের খবর: ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত বৈঠককে শুভ সূচনা বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এ দুই বিশ্বনেতা। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এটি সফল এবং তারা বেশকিছু ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সম্পর্ক জটিল হয়েছে বলে স্বীকার করেন পুতিন। তিনি বলেন, এটি সকলের কাছে পরিষ্কার যে, একটি জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চলছে। বর্তমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাধা এবং চলমান উত্তেজনা এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পেছনে সঠিক কোনো কারণ নেই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে দাঁড়ানো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কখনোই হস্তক্ষেপ করেনি রাশিয়া। তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এ বিষয়টি উত্থাপন করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাদের মাঝে এ ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।
২০১৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জয়লাভ করুক সেটি চেয়েছিলেন কি-না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় চেয়েছিলাম।
পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে এই সম্পর্ক চার আগে পরিবর্তন হয়েছে। পুতিনের সঙ্গে তার স্বাক্ষাতের পর দুই দেশের সম্পর্ক তাৎপর্যপূর্ণ উন্নত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, আমাদের সম্পর্ক কখনোই এতটা খারাপ হয়নি, যা বর্তমানে রয়েছে। তবে এতে পরিবর্তন আসছে চার প্রায় আগে। আমি আসলেই এটি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জনপ্রিয় না হলেও কূটনৈতিক দিক থেকে প্রয়োজনীয়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এই প্রেসিডেন্ট। এ সময় একজন সাংবাদিক ট্রাম্পের কাছে জানতে চান প্রেসিডেন্ট পুতিন তার প্রতিদ্বন্দ্বী কি-না? ট্রাম্প বলেন, আমি তাকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী বলেই মনে করি এবং তিনি একজন ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী। আমি মনে করি প্রতিদ্বন্দ্বী শব্দটি একটি সম্পূরক।
দুপুরে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে টুইটারে দেয়া এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বোকামি এবং নির্বুদ্ধিতার কারণে বর্তমানে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বহুল প্রতিক্ষীত এ বৈঠকের শুরুতে করমর্দন করেন তারা; তবে তাদের এই করমর্দন স্থায়ী ছিল মাত্র তিন সেকেন্ড। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, তিন সেকেন্ডের করমর্দনে দুই প্রেসিডেন্টকে চিন্তিত দেখায়। এমনকি তাদের মুখে হাসিও দেখা যায়নি।
পরে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন বিশ্বের প্রভাবশালী এ দুই প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাদের এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। হোয়াইট হাউস বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি প্রত্যক্ষ বৈঠক চান; যেখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ অথবা কোনো তথ্য ফাঁস হবে না। এমনকি ওই বৈঠকের আলোচনাও রেকর্ড থাকবে না।
তবে সমালোচকরা ট্রাম্প-পুতিনের এই বৈঠককে বিশ্বাসঘাতকতার বৈঠক হিসেবে উল্লেখ করে টুইটারে ট্রিজনসামিট (#TreasonSummit) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন; যা ইতোমধ্যে টুইটারে ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।
এদিকে, ফিনল্যান্ডে ঐতিহাসিক এ বৈঠকের আগে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন দেশটির স্যোসাল অ্যাক্টিভিস্টরা। এ সময় ট্রাম্পের মুখোশ ও ট্রাম্পবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান লেখা টি-শার্ট পরে বিক্ষোভ করেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, আজকের দিনের সবচেয়ে অস্বাভাবিক একটি বিষয় হচ্ছে, হেলসিংকিতে গর্ভবতী ট্রাম্প বিক্ষোভ করছেন।
বিক্ষোভকারীদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে তথাকথিত ‘গ্লোবাল গ্যাগ’ আইন; যা ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরুজ্জীবিত করেন। এই আইনে যেসব বেসরকারি সংস্থা সরকারি অর্থ সহায়তা নেয় তারা অন্যান্য দেশের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ন্যায় গর্ভপাত না ঘটানো অথবা সক্রিয়ভাবে গর্ভপাতের প্রচার করা থেকে বিরত থাকবে।
তবে এই নীতিমালা মার্কিন নারীদের ওপর তেমন কোনো প্রভাব না ফেললেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রভাব দেখা গেছে; যেখানে তহবিল এবং সুযোগ-সুবিধা ইতোমধ্যে সীমিত হয়ে পড়েছে।