দেশের খবর: নিজের পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসকদের ‘ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া আর গাড়ি-বাড়ির চিন্তাভাবনা বাদ’ দিতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বুধবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৮ উপলক্ষে বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দুর্নীতি সমাজ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণকে সচেতন করে তোলায় জোর দেন তিনি।
“আর এ কাজটি শুরু করতে হবে আপনাদের অফিস ও পারিবারিক অবস্থান থেকে। মাঠ প্রশাসনের সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করতে হবে।”
এ সময় জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে আবদুল হামিদ বলেন, “ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া আর গাড়ি-বাড়ির চিন্তাভাবনাকে বাদ দিয়ে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”
সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা জনগণের করের টাকায় হয় মনে করিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মনে রাখবেন, আমার আপনাদের বেতন-ভাতা, সম্মানি ও অফিসের খরচের টাকা জনগণ দেয়। তাই প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকাণ্ডে তাদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
“জনগণ যাতে সরকারি সেবা নিতে গিয়ে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে।”
জনমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন আমাদের গ্রামগুলি শান্তির নীড় হিসেবে খ্যাত। কতিপয় অসাধু লোকের কারণে গ্রামের শান্তি আজ বিঘ্নিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছে। ছোটখাট বিষয় যা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা সম্ভব তা এই অসাধু ব্যক্তিদের কারণে মামলায় পরিণত হচ্ছে।
“গ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এদের দৌরাত্ম্য হ্রাসে ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে দেশের বেশিরভাগ মামলাই হয় জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে। তাই জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাইজড করতেও আপনাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।”
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যাতে নিরীহ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সজাগ থাকার কথা নির্দেশনা দেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, “মাদক যুব সমাজকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাদকদ্রব্য যাতে যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
“চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে নিরীহ কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এবং প্রকৃত অপরাধীরা যাতে সাজা পায় সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।”
দেশের মাটি থেকে যে কোনও মূল্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি জেলা প্রশাসকদের জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে গণসচেতনতা সৃষ্টিরও আহ্বান জানান।
বঙ্গভবনের দরবার হলে ওই অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ আরও বলেন, “দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মামুলি প্রথা পরিহার করে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনমূলক কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মনে রাখবেন আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং জেলা পর্যায়ে আপনাদের অনেক অনুসারী রয়েছে।
“তাই নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যাতে অন্যরা আপনাকে সম্মানের সাথে অনুসরণ করতে পারে। আপনাদের কোনও কর্মকাণ্ডে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামান এবং গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার।
পরে রাষ্ট্রপতি সব জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ফটোসেশনে অংশ নেন।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে মঙ্গলবার এই ডিসি সম্মেলন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তিন দিনের এই সম্মেলন শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার।