বিনোদন সংবাদ: ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই দশকের বাংলাদেশি পাঠকের বিরাট অংশ শৈশব থেকে বেড়ে উঠেছে মাসুদ রানা পড়ে। এখনো বিশাল একটি পাঠকগোষ্ঠী পড়ে মাসুদ রানা। এখনো নতুন মাসুদ রানার প্রথম সংস্করণে ২০ হাজার কপি ছাপা হয়। এই দেশে এটি এখনো একটি অনেক বড় সংখ্যা।
আমাদের নিজেদের কোন সুপার হিরো নেই, নেই সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান । আমাদের কাছে সুপার হিরো মানেই মাসুদ রানা, যে -বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত স্পাই গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তর। বিচিত্র তার জীবন । অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে-কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর-সুন্দর এক অন্তর তার। একা। টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না । কোথাও অন্যায় অবিচার দেখলে রুখে দাঁড়ায়। পদে পদে তার বিপদ শিহরণ ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি।
সে প্রচণ্ড রকমের দেশ প্রেমিক। একই সাথে সরল, কোমল ও কঠিন । সেই বাংলার জেমস বন্ড। মাসুদ পারভেজ (নায়ক সোহেল রানা) মাসুদ রানা সিরিজের ‘বিস্মরণ’ অবলম্বনে, ১৯৭৩ সালে মাসুদ রানা চলচ্চিত্র তৈরি করেন। আর ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। এর পর আর মাসুদ রানা চলচ্চিত্র হিসেবে নির্মিত হয়নি। টিভিতে অবশ্য মাসুদ রানা এসেছে মাঝখানে। অভিনেতা ও নির্মাতা তৈৗকির আহমেদের সেই মাসুদ রানা তৈরি হয়েছিল সিরিজের প্রথম দিককার আলোচিত বই পিশাচ দ্বীপ অবলম্বনে।
এদিকে, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলেন, মূলত কাজীদা কাউকে মাসুদ রানা বানানোর জন্য রাইট (কপিরাইট) দেয় না, কারণ কেউ নাকি ঠিক মতো রানাকে উপস্থাপন করতে পারে না। জাজ এর পক্ষ থেকে শুরুতেই একটা বই-এর রাইট এর জন্য যোগাযোগ করা হলে উনি রাইট দেননি। তবে শুভ সংবাদ হলো, এখন কাজীদা জাজের ওপর আস্থা রেখেছেন। উনার বিশ্বাস জাজ ঠিক মতো মাসুদ রানা বানাতে পারবে। এই জন্য প্রথমে উনার ৩টি বইয়ের রাইট দিয়েছেন ৫ বছরের জন্য- ১. ধ্বংস পাহাড় ২. ভারতনাট্যম ৩. স্বর্ণমৃগ।
আব্দুল আজিজ জানান, জাজ এই ৩টি সিনেমা বানাবে ৫ বছরের মধ্যেই। প্রথম সিনেমার নাম, মাসুদ রানা (ধ্বংস পাহাড়) যার প্রাথমিক বাজেট ৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কাজী আনোয়ার হোসেন ‘ধ্বংস পাহাড়’ রচনা করেছিলেন ১৯৬৫ সালে। তখনকার আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্রেক্ষাপট এখন থেকে ভিন্ন। তখন বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান ছিল আর ভারত কে শত্রু দেখান হয়েছে। ভারত পাগল বৈজ্ঞানিক কবির চৌধুরী সাথে মিলে, কাপ্তাই বাঁধ উড়িয়ে দেবে, যেদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কাপ্তাই বাঁধে আসবেন। সেই বাঁধের সাথে প্রেসিডেন্ট ও ভেসে যাবে।
আব্দুল আজিজ জানান, এখন তো ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। এখন তারা এটা করবে না। এছাড়া পরিবর্তন হয়েছে। অনেক টেকনিক্যাল দিক। তাই কাজীদার অনুমতি নিয়ে পূর্বের গল্পের প্লট ঠিক রেখে, আমরা নতুন করে গল্পের বিন্যাস করছি। আমরা শুটিং করবো দেশে বিদেশে। এই শুটিং এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কাপ্তাই বাঁধের শুটিং এর পারমিশন পাওয়া। কারণ, কাউকে কখনো কাপ্তাই বাঁধে শুটিং করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সেখানে জনসাধারণেরও প্রবেশাধিকার নেই। যাই হোক, আমরা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে পারমিশন নেওয়ার চেষ্টা করবো ।
এখন কথা হচ্ছে কে হবে মাসুদ রানা? জাজ জানাচ্ছে, যাকে নেবো, তাকে আগামী ৩টি মাসুদ রানা সিরিজের জন্য নেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী চুক্তি করা হবে। কে হবে মাসুদ রানা, তা খুব শিগগিরই আপনাদের জানানো হবে।
সম্প্রতি মাসুদ রানার সাথে যুক্ত হয়েছে ইউনিলিভার। এক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জাজ ও ইউনিলিভার এর মধ্যে চুক্তি সাক্ষর হলো এবং আরও কিছু ব্রান্ড খুব শিগগির যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। আর মাসুদ রানা মুক্তি দেওয়া হবে বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন দেশে একই দিনে।