আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১৯৬০ ও ৭০’র দশকে দক্ষিণ ভারতের ডাকসাইটে অভিনেত্রী ছিলেন জয়াললিতা। তামিল, তেলেগু এবং কানাডা ভাষায় বহু দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন জয়াললিতা। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের চলচ্চিত্রের নায়কদের রাজনীতিতে আসার উদাহরণ আছে। কিন্তু সিনেমার নায়িকারা যে রাজনীতিতে এসে সফল হতে পারে, জয়াললিতা তার উদাহরণ।
জয়াললিতার বহু সিনেমার নায়ক ও গুরু এমজি রামচন্দ্রনের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন জয়াললিতা। রামচন্দ্রনের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীর সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন জয়াললিতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়াললিতাকেই তার দল এআইডিএমকে’র নতা-কর্মীরা অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে মেনে নেয়। ১৯৯১ সালে প্রথম তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জয়াললিতা। দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাডুতে অন্তত পাঁচ দফায় মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হিসেবে জয়াললিতার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ যেমন উঠেছে তেমনি দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। জয়াললিতা একবার বলেছিলেন, ” কখনো আমি নিজের আবেগ প্রকাশ্যে দেখাই না। সবার সামনে কখনো রেগে যাইনি বা কাঁদি নি। অথচ রাজনীতিতে আসার আগে আমি এমন ছিলাম না। খুব লাজুক ছিলাম। অপরিচিতদের সামনে আসতে চাইতাম না।আমার কাজ দেখে মানুষ আমাকে খুব কড়া স্বভাবের মনে করে। তবে আমি কখনো নিজে ইচ্ছা করে কড়া হতে চাই নি।”
আঞ্চলিক রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করলেও জাতীয় প্রেক্ষাপটেও জয়াললিতার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বহুবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জয়াললিতার সমর্থনের ভরসায় টিকে ছিল। তামিলনাডু বিধানসভাতেও বিরোধী দলকে রীতিমতো দাবিয়ে রাখতেন জয়াললিতা। তবে ২০১৪ সালে কর্ণাটকের একটি বিশেষ আদালত তার আয়ের সাথে সংগতিহীন সম্পদ অর্জনের পুরনো একটি দুর্নীতির মামলায় তাকে চার বছরের সাজা দিয়েছিল। ভারতের কোন ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীর জেলে যাবার ঘটনা সেটাই ছিল প্রথম।
কিন্তু তামিলনাডুতে জয়াললিতার জনপ্রিয়তায় কোন চিড় ধরেনি। গরীবদের ঘরে-ঘরে রঙ্গিন টেলিভিশন, মিক্সার গ্রাইন্ডার মেশিন দেবার প্রকল্প এবং সস্তায় গরীবদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করে দেয়া তাকে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছিল। জয়াললিতাকে বহুদিন ধরে দেখেছেন বর্ষীয়ান সংসদ সদস্য গুরুদাস দাসগুপ্ত। তিনি বলছেন জয়াললিতার রাজনৈতিক জীবনে অনেক উত্থান-পতন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়াললিতা ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
দাসগুপ্ত বলেন, ” ওর নিজস্ব একটা ধরণ ছিল। যেটা মানুষের মনকে টানতে পেরেছিল। মানুষ তাকে একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে মনে রাখবে।” ভারতের অনেক পর্যবেক্ষক তাকে ‘তামিলনাডুর ইন্দিরা গান্ধী’ হিসেবে বর্ণনা করেন। বিতর্ক এবং জনপ্রিয়তা – এ দু’টো বিষয় এ দুই রাজনীতিবিদের জীবনে চিরকাল পাশাপাশি হেঁটেছে। জয়াললিতা এককালে ভালো গান গাইতেন, নাচতেন এবং সুবক্তাও ছিলেন। তার প্রয়াণে ভারতীয় রাজনীতির সবচেয়ে বর্ণময় এবং প্রভাবশালী চরিত্রদের একজন বিদায় নিলেন।-বিবিসি বাংলা।