দেশের খবর: বিষাদের দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে ঈদের দিনটি পার করে দিয়েছে কক্সবাজারের ৩০টি শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ঈদের নামাজ ছাড়া দিনটি আর কোনও বিশেষত্বই বহন করেনি, আনন্দ নয় বরং উদাস চোখের স্মৃতির জলে ডুবেই দিনটি শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তাদের অনেকে। এদিকে ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘কমপক্ষে আড়াই হাজার গরু জবাই করা হয়েছে। এইসব পশু সরকারি উদ্যোগে কেনা হয়নি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব গরু পেয়েছি, সেগুলো একত্রিত করে যেখানে, যতটা দরকার ততটা হিসাব করে পাঠানো হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে নিজে কোরবানি দিয়েছেন। তবে অধিকাংশই কোরবানি দিতে পারেননি। অধিকাংশরই আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। যারা কোরবানি দিয়েছেন এবং যারা দিতে পারেননি উভয় দলই নামাজের পর থেকে দিনব্যাপী অতীতের ঈদের স্মৃতি-রোমন্থন করে সময় কাটিয়েছেন।
বুধবার (২২ আগস্ট) সকালে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে পুরানো জামা পরে নামাজে অংশ নেয় রোহিঙ্গা শিশু আবদুল খালেক। সে জানায়, এপারে তার কেউ নেই; ওপারেও কেউ নেই। গত বছর এইদিনে পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে রোহিঙ্গাদের দলে সঙ্গে এপারে পালিয়ে আসে সে। পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা জানা নেই। তবে সে পরিবারের খোঁজে মিয়ানমারে যেতে চায়। কিন্তু সেখানে সেনার ভয় আছে বলেও সে ভীত বলে জানিয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, মিয়ানমার আকিয়াবের গরু ব্যবসায়ী দিল মোহম্মদ এখন কক্সবাজারের উখিয়া মধুরছড়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে বসতি করছেন। তিনি বলেন, ‘সেখান গরু বিক্রি করতাম। এখানেও গরুর ব্যবসা করছি। কোরবানিতে টেকনাফ থেকে গরু কিনে রোহিঙ্গা শিবিরে হাট বসিয়ে বিক্রি করেছি ২৫টি গরু। লাখ টাকার কাছাকাছি লাভ হয়েছে। তবে মিয়ানমারে কোরবানি মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় হতো।’ রোহিঙ্গা শিবিরে ৪০ হাজার টাকা দামের গরু কোরবানি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের আজিম উল্লাহ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে হারানোর সেই যন্ত্রণা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। (বাংলাদেশে) আসার পর গত এক বছরে এক টুকরো মাংসও খেতে পারিনি।’
টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবদুল মতলব জানান, টেকনাফে ২৪ ও ২৫ নম্বর ক্যাম্পে অর্থাৎ লেদা ও আলীখালীর লাখের অধিক রোহিঙ্গার জন্য কোনও গরু কোরবানি হয়নি। এখাকার রোহিঙ্গারা অনেক কষ্টে আছে।’
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।