সোমবার রাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। ‘আম্মা’ হিসেবে পরিচিত জয়ললিতার ব্যক্তিগত জীবন যেমন রঙিন ছিল, তেমনই ছিল রহস্যে মোড।
শেষ জীবনে তার ব্যক্তিগত পরিসরে বিশেষ কারও প্রবেশাধিকারও ছিল না। তিনি ছিলেন চিরকুমারী। কিন্তু এমনটা নয় যে, জয়ললিতার কোন রোমান্টিক সম্পর্ক কখনই ছিল না। তবু কেন তিনি বিয়ে করলেন না? তামিল পত্রিকায় জয়ললিতার আত্মজীবনী ও তার ঘনিষ্ঠদের কথা থেকে যে সম্ভাব্য কারণগুলো বেরিয়ে এসেছে তা তুলে ধরেছেন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এবেলা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
প্রথমত, জয়ললিতাকে ছোট থেকেই অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। পরিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মা-বাবার ইচ্ছায় তাকে অভিনয়ে নামতে হয়। ফলে আইন নিয়ে পড়াশোনার যে ইচ্ছা তার ছিল, সেই আশা ধাক্কা খায়। তখনই বাবা-মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কে চিড় ধরে। নিজের বাবার সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, তিনি বেহিসেবি আর আরামপ্রিয় ছিলেন। সেই থেকেই সম্ভবত পুরুষদের প্রতি তার বিতৃষ্ণা জন্মাতে শুরু করে।
দ্বিতীয়ত, স্কুলে পড়ার সময়ে এক কিশোরের প্রেমে পড়েন তিনি। কিন্তু সেই প্রেম অচিরেই ভেঙে যায়। শোনা যায়, ছেলেটি জয়ার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
তৃতীয়ত, অভিনয় করতে গিয়ে ঘনিষ্ঠতা হয় তেলগু সিনেমার নায়ক শোভনের সঙ্গে। তবে সেই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। রাজনীতিতে আসার আগেই শোভনকে ছেড়ে চলে আসেন জয়া। সেই সময়ে তিনি একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন।
চতুর্থত, জয়ললিতার জীবনের সবচেয়ে আলোচিত সম্পর্ক বোধ হয় তার সঙ্গে তামিল মহানায়ক এমজি রামচন্দ্রনের। এমজিআর শুধু জয়ার ছবির হিরোই ছিলেন না, জয়ার রাজনীতির হাতেখড়ি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমজিআর-এর থেকেই। তাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। ততদিনে অবশ্য রামচন্দ্রনের দু’টি বিয়ে হয়ে গেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী জানকী কখনই জয়ললিতাকে রামচন্দ্রনের কাছে আসতে দিতে চাননি। রামচন্দ্রনের মনে জয়াকে নিয়ে সন্দেহও দানা বেঁধেছিল। এমজিআর-এর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে জয়া তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদেও বসতে চেয়েছিলেন। সেই প্রণয়ের সমাপ্তি সুখের হয়নি।
পঞ্চমত, তিনি মনে করতেন, প্লেটনিক প্রেম (যে ভালোবাসায় যৌন সম্পর্ক থাকে না) বলে কিছু হয় না। একজন পুরুষ ও নারীর মধ্যে হয় রোমান্টিক সম্পর্ক বা শুধুই বন্ধুত্ব হতে পারে। জয়া জীবনে কোন পুরুষকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। যাদেরকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন, তারাই জয়ললিতাকে হতাশ করেছিলেন। ফলে জয়া গভীর একাকীত্বে ভুগেছেন সারাজীবনই। একবার বলেছিলেন, জীবনে একমাত্র একজনকেই বিশ্বাস করবে— নিজেকে।