দেশের খবর: সকল চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরা দেশে চলে গেলেন একাত্তরের বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
১৯৩৬ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন রমা চৌধুরী। ১৯৬১ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বলা হয়ে থাকে- তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রিধারী।
চার ছেলে সাগর, টগর, জহর এবং দীপংকরকে নিয়ে ছিল তার সংসার। কিন্তু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে দুই ছেলেকে হারানোর পাশাপাশি নিজের সম্ভ্রমও হারান তিনি। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার ঘর-বাড়ি। তবুও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি এ বীরাঙ্গনা।
শুরু করেন নতুনভাবে পথচলা। লিখে ফেলেন একে একে ১৮টি বই। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘একাত্তরের জননী’। এসব বই বিক্রি করেই চলত তার সংসার। কোমরের আঘাত, গলব্লাডার স্টোন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রমা চৌধুরী ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু কোন চেষ্টায় কাজে আসেনি। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
চট্টগ্রামে রমা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার জন্য শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার জন্য কিছুক্ষণের মধ্যে লাশ নেয়া হবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
রমা চৌধুরী ১৯৬২ সালে কক্সবাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কর্মজীবন শুরু করেন। পরে দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন।