নিজস্ব প্রতিবেদক: মাত্র কিছুদিন আগেই লক্ষ লক্ষ টাকার জাকমকপূর্ণ জেলা ক্রীড়া সংস্থা নির্বাচন প্রত্যক্ষ করল সাতক্ষীরাবাসী। অন্যদিকে সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন যখন মোস্তাফিজ, সৌম্য, সাবিনা, শিপলুদের সাফল্যে সারাদেশে ঈর্ষণীয় উচ্চতায় পৌঁছেছে তখনই জানা গেল এক ভয়ংকর দুঃসংবাদ। টাকার অভাবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের ফুটবলে ওয়াকওভার দিয়ে ফিরে এসেছেন সাতক্ষীরা দল। আর এ জন্য একে অপরকে দায়ী করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল এ্যসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান ও টিম লিডার আকবর আলী। প্রশ্ন উঠেছে, যে জেলার ক্রীড়া সংস্থা নির্বাচনে লক্ষ লক্ষ টাকা ছড়াছড়ি আর প্রদর্শনী দেখল সাতক্ষীরাবাসী সেই জেলার কিশোরীদের একটি ফুটবল দল জাতীয় পর্যায়ে খেলতে গিয়ে ফিরে আসল সামান্য ১০টি হাজার টাকার জন্যÑ কি হচ্ছে সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গনে!
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সাতক্ষীরা দলের। কিন্তু তার আগেই সেমিফাইনালে অয়াকওভার দিয়ে ফিরে আসার বিষয়টি সাতক্ষীরার ক্রীড়া অঙ্গনকে রীতিমত হতাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল এ্যসোসিয়েশনের সভাপতির নির্দেশে অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের ফুটবলে সেমিফাইনালে যাতে না খেলতে হয় সে জন্য দলটি ইচ্ছে করেই গ্রুপ পর্বে হেরে গিয়েছিল খাগড়াছড়ি দলের কাছে। তারপরও তারা ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েও তাদের কাছে খরচের টাকা না থাকায় জেলা ফুটবল এ্যসোসিয়েশনের সভাপতির নির্দেশে একবুক ব্যাথা ও বেদনা নিয়ে তাদের মাতৃভূমি সাতক্ষীরায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের কোচ আকবর আলী জানান, তার প্রতিষ্ঠিত শহরের চালতে বাজার সংলগ্ন জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্টানে ১৩ জন নারী ফুটবলার বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তারা জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ সহ বিভিন্ন খেলায় অংশ গ্রহন করেছেন। তিনি তাদের ভরন পোষনসহ তার বাড়িতে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থাও করে তাদের রেখে দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠান থেকে সাবিনা, সুরাইয়া, রওশন ও মাছুরা জাতীয় ফুটবলে, পাখি ও দোলা জাতীয় কাবাডিতে, রিক্তা, মুক্তা, আরিফা ও সালমা খোখো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। শুধু তাই নয় ১০০ মিটার স্প্রিটএ বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী খেতাব প্রাপ্ত শিরিন আকতারও তার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আবার তার প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে অনেক নারী বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করছেন।
তিনি আরো জানান, জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্টের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ)। এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা অংশগ্রহণ ফি বাবদ দিয়েছিল ফুটবল ফেডারেশন (ঢাকা) থেকে। বাকি ১৫ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৫ হাজার টাকা দেন সাতক্ষীরা জেলা ডিএফএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাঁন। পরে বাকি টাকা চাইলে তিনি টাকা ম্যানেজ করা যাচ্ছে না বলে সাফ জানিয়ে দেন এবং তাদের খারাপ খেলে হেরে বাড়ি ফিরে আসার পরামর্শ দেন। এতে মনের কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে ১০ ডিসেম্বর ফিরে আসেন কোচ আকবর আলীসহ তার নারী ফুটবলাররা। আর এ কারনে ১২ তারিখের খেলায় সাতক্ষীরার বিপক্ষে ওয়াকওভার পায় ময়মনসিংহ। সামান্য ১০ হাজার টাকার জন্য যাদের কারণে জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ মেয়েদের ফুটবলে সাতক্ষীরা দল অংশগ্রহণ করতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাতক্ষীরার ক্রীড়ামোদীরা।
নারী ফুটবলার ফারজানান সুলতানা, সারাবান জহুরা, তামান্না সুলতানা ও পারভিন সুলতানা জানান, আমরা এ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হবো এই মনোবল নিয়েই আমরা খেলা করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের স্যার (কোচার আকবর আলী)) আমাদের জানান, আমার কাছে আর কোন খরচের টাকা নাই তাই বাধ্য হয়ে আমাদের সেমিফাইনালে অংশ গ্রহন না করেই চলে যেতে হবে। শুধু মাত্র খরচের টাকার অভাবে আমাদের বাধ্য হয়ে মনের কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসতে হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য আরিফ হাসান প্রিন্স জানান, সামান্য টাকার জন্য আমাদের নারী ফুটবলাররা সেমিফাইনালে না খেলে চলে আসবেন এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখ জনক। তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা জেলা ডিএফএর নেতারা তাদের চেয়ার ঠিক রাখার জন্য একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি করেই চলেছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা ডিএফএর সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খাঁন তার বিরদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, টিম লিডার আকবর আলী আমাদেরকে জিম্মি করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় আমরা তা দিতে না পারায় তিনি টিম নিয়ে ঢাকা থেকে ফিরে এসেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মহিউদ্দীন জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। টাকার অভাবে এভাবে ঢাকা থেকে না খেলে ফিরে আসার আগে আমাকে জানানো উচিত ছিল।এটি খতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট