বিশেষ ডেস্ক: ‘আমি অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। আমার স্বামীর নাম ইন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। আমার বাবার নাম জর্জ বেকার। মায়ের নাম তসলিমা নাসরিন।’
অঙ্কিতা ভট্টাচার্য নামের এক নারীর এমন উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম কলকাতা ২৪x৭।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকালে এই অভিযোগ সামনে আসে। সাংবাদিক বৈঠক করে অঙ্কিতা ভট্টাচার্য নামে ওই তরুণি দাবি করেন, তাঁর বাবা জর্জ বেকার, মা তসলিমা। কেউই তাঁর সঙ্গে থাকেননি কোনোদিন। গৌরী নামে এক নারীর কাছে তিনি মানুষ হয়েছেন।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পশ্চিম বঙ্গের হাওড়া থেকে বিজেপির মনোনীত সংসদ সদস্য জর্জ বেকারের সঙ্গে তসলিমা নাসরিনের সম্পর্ক ছিল। আর সেই সম্পর্কেরই ফসল অঙ্কিতা ভট্টাচার্য নামের এই নারী।
তসলিমা নাসরিনকে ঘিরে নানাবিধ বিষয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য। অন্য একটি হল তাঁর যৌন জীবন।
জীবনে তিন বার বিয়ে করেছেন তিনি। প্রথমটি আশির দশকে। পরের দুটি ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে। বিয়ের বাইরেও যে তাঁর যৌন সম্পর্ক ছিল সেই বিষয়ে অবশ্য কোনও লুকোচুরি রাখেননি তসলিমা। তবে ঠিক কার কার সঙ্গে তিনি নিজের যৌনতা ভাগ করে নিয়েছেন সেই বিষয়ে অনেক বিতর্ক আছে।
অন্যদিকে ভারতের লোকসভার সাংসদ জর্জ বেকারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য জানা যায় না। আসামের এক গ্রিক পরিবারে জন্ম নেওয়া বেকার পেশায় অভিনেতা। অসমীয় ভাষার পাশাপাশি অনেক বাংলা এবং হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন। যাত্রার মঞ্চ এবং টেলিভিশনেও তাঁকে দেখা গিয়েছে।
২০১৪ সালে রাজনীতির ময়দানে আসেন জর্জ বেকার। লোকসভা ভোটে হাওড়া থেকে লড়াই করলেও জিততে পারেননি। তবে রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন পেয়ে তিনি অ্যাংলো ইন্ডিয়ান হিসেবে লোকসভার সদস্য হয়েছেন।
এই জর্জ বেকারের সঙ্গেই নাকি সম্পর্ক ছিল তসলিমা নাসরিনের। এদের সন্তানই হচ্ছে বর্ধমানের ভাতার থানা এলাকার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। যাঁর ছোটবেলা কেটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বেহালায়। তাঁকে পালন করেছেন গৌরী ভট্টাচার্য নামের এক মহিলা যিনি আবার সম্পর্কে জর্জ বেকারের স্ত্রী অর্পিতার বোন। গৌরীদেবীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তার এই পালিত কন্যা এই সম্পর্কে আগেই জানতেন বলে জানা যায়। স্মৃতিচারণের সুবিধার্থে দিয়েছেন কয়েকটি ছবি। একই সঙ্গে তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে আরও তথ্য-প্রমাণ কোথায় রয়েছে তাও জানিয়েছিলেন।
জন্মের পরে বেশ কয়েক বছর জন্মদাতা বাবা-মা জর্জ বেকার এবং তসলিমা নাসরিনের সঙ্গেই কাটিয়েছিলেন অঙ্কিতা। সেই সময়ের বেশ কিছু ছবি গৌরীদেবী তাঁকে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। একই সঙ্গে সেই ছোটবেলার স্মৃতি আবছা হলেও তাঁর মন থেকে মুছে যায়নি বলেও জানিয়েছেন অঙ্কিতা। আরও অনেক ছবি এবং প্রমাণ গৌরীদেবীর দাদা রণজিৎ-র কাছে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অঙ্কিতা। গৌরীদেবীর জীবদ্দশায় ভাতারের বাসিন্দা ইন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিয়ে হয় অঙ্কিতার।
অঙ্কিতা ভট্টাচার্য আরও জানিয়েছেন যে নিজের প্রকৃত বাবা-মায়ের বিষয়ে জানার পরে জর্জ বেকারের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। নিরাশ হতে হয়নি তাঁকে। অঙ্কিত বলছেন, ‘জর্জ বেকারের কাছে আমি পিতৃস্নেহ পেয়েছি।’ যদিও তা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
অঙ্কিতার অভিযোগ স্ত্রী অর্পিতার চাপেই কন্যা অঙ্কিতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন জর্জ বেকার। বন্ধ করে দিয়েছেন সমস্ত যোগাযোগ।
বাবার সম্মানের কথা ভেবেই সমগ্র বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন অঙ্কিতা। তবে যাতে তিনি চুপ থাকেন তার জন্য অনেক হুমকিও এসেছে। প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ‘কিন্তু নিজের প্রাপ্য আদায়ের জন্য একপ্রকার বাধ্য হয়েই আর চুপ থাকতে পারলাম না,’ বলছেন অঙ্কিতা।
মা তথা লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল? এই বিষয়ে কিছু বলেননি অঙ্কিতা।
নাগরিকত্ব না থাকলেও বর্তমানে ভারতের জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে রয়েছে তসলিমা নাসরিন। ওই শহরেই অবশ্য রয়েছে ভারতের সংসদ ভবন। সাংসদেরাও ওই শহরেই থাকেন। তাহলে কী আবার…?? প্রশ্ন থাকছেই।