দেশের খবর: দেশের চারটি জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও তাদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে উড়ো চিঠি পাঠিয়েছে দুর্বৃত্তরা। চিঠিগুলো পেয়েছেন মাদারীপুর, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, বরগুনা ও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকেরা। তাঁরা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তাঁরা জানান, গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তাঁরা চিঠিগুলো পেয়েছেন। চিঠিতে নাম-ঠিকানা নেই। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে প্রশাসকসহ তাদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
আজ শুক্রবার এ বিষয়ে খবরগুলো তুলে ধরা হলো:
ফরিদপুর : ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা উম্মে সালমা তানজিয়া এবং বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম শামীম হাসানকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে একটি চিঠি পাই, লাল কালি দিয়ে লেখা চিঠিতে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
উম্মে সালমা জানান, ২০ ডিসেম্বর রাতে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তানজিয়া বলেন, ‘যেকোন মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এর ব্যত্য় ঘটানো যাবে না।’
এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী থানার ওসি এটিএম শামীম হোসেন জানান, চিঠি পাওয়ার পর বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে। লাল কালির চিঠিতে পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন খান বলেন, ‘হুমকির পর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, একই সঙ্গে কারা বিষয়টি ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
বরগুনা : উড়ো চিঠি পেয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কবির মাহমুদও। তাঁর কাছে এই চিঠি এসে পৌঁছায় গতকাল বৃহস্পতিবার।
কবির মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল ডাকযোগে একটি চিঠি আসে আমার নামে। পরে চিঠিটি খুলে দেখতে পাই, বরগুনার দুটি সংসদীয় আসনের নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে, আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি সাধনের জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।’ তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তিনি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেননি বলে সংবাদকর্মীদের জানান।
এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘উড়ো চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের চিন্তিত হওয়ার কিছুই নেই। পুলিশ তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বরগুনার আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। নির্বাচনকে কেন্দ্র নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্যই এ ধরনের চিঠি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।’
পাবনা : উড়ো চিঠি পেয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকাও। চিঠিতে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ ডিসি অফিসের ঠিকানায় ওই চিঠিটি আসে বলে তিনি জানান।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করে কামরুন নাহার জানান, খাকি রঙের খামে এক পাতার এই চিঠিতে প্রেরকের নাম ঠিকানা নেই। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
কামরুন নাহার বলেন, ‘চিঠিতে বলা হয়েছে, আমার কর্মকাণ্ড তারা খেয়াল করছে। তিনদিনের মধ্যে আমি যদি ঠিক না হই, তাহলে তারা আমাকে দেখে নেবে। শুধু আমাকে না, আমার আত্মীয়-স্বজন, ছেলেমেয়ে ও সম্পত্তির ওপর তারা নজর রাখছে। ঠিক না হয়ে গেলে তারা আক্রমণ চালাবে। চিঠির শেষের অংশে লেখা আছে চলমান।’
মাদারীপুর : মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। বিষয়টি তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন।
ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, নাম ঠিকানাবিহীন এক পাতার চিঠিতে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠিটি গত বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর অফিসের ঠিকানায় পেয়েছেন। তার সঙ্গে একটি চিঠির খাম আসে। এতে লাল কালিতে লেখা ছিল ‘অতীব গোপনীয়’ বিষয়। আরো লেখা ছিল, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় না রাখলে তাঁকে ও পরিবারকে দেখে নেওয়া হবে। চিঠি হাতে লেখা ছিল, তবে কারও নাম লেখা ছিল না।’
বিভাগীয় কমিশনার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশের ডিআইজি এবং গোয়েন্দা বিভাগকে বিষয়টি লিখিত আকারে জানিয়েছেন বলেও জানান ওয়াহিদুল ইসলাম।
একইভাবে বেনামে চিঠি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে বাগেরহাট থেকেও। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এমন তথ্য দিলেও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তপন কুমার বিশ্বাস।