দেশের খবর: দুই থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তিন যুবককে অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকিও দেন দুই কর্মকর্তা। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায়। অপহরণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
উদ্ধারকৃত অপহৃতরা হলেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি এলাকার হান্নান সরকারের ছেলে রায়হান সরকার, একই এলাকার লতিফ সরকারের ছেলে লাবিব হোসেন ও একই জেলার শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে নওশাদ ইসলাম মাহফিন। এদের তিনজনের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।
অপহৃত ও তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার বিকাল ৫টার দিকে রায়হান সরকার, লাবিব উদ্দিন, নওশাদ ইসলাম, তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তারা গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে যান। গ্যাস নেওয়ার সময় তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকানে যান চা খেতে। গ্যাস নিয়ে তাদের গাড়িটি ফিলিং স্টেশন থেকে একটু এগিয়ে যাওয়ার সময় সাদা পোশাকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানসহ ৩-৪ জন লোক একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ওই যুবকদের গাড়ি আটকায়। পরে গাড়ি থেকে রায়হান মিয়া, লাবিব উদ্দিন ও নওশাদ ইসলামকে ধরে নিয়ে যান। এ সময়ে চা খেতে যাওয়া বাকি দুই বন্ধু রক্ষা পায়।
পরে ওই তিন বন্ধুকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দেওড়ায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে নিয়ে যায় পুলিশের ওই সদস্যরা। সেখানে গিয়ে তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে বেশ কিছু সময় তাদের সঙ্গে টাকা নিয়ে দেনদরবার হয়। একপর্যায়ে ওই দুই এএসআই তাদের জানায়, ১০ লাখ টাকা দিলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
এরই মধ্যে অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান মুঠোফোনে তাদের পরিবার ও কালিয়াকৈর থানাকে বিষয়টি জানান। পরে কালিয়াকৈর থানার ওসি আলমগীর হোসেন মজুমদার বিষয়টি মির্জাপুর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে দুই থানার সহযোগিতায় তাদের ওইদিন রাত ৮টার দিকে মির্জাপুর থানায় এবং পরে রাত ১২টার দিকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন গাজীপুর পুলিশ লাইনে ও মির্জাপুর থানার মুসফিকুর রহমানকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নিজ নিজ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও একাধিক পুলিশ জানিয়েছেন, কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুসফিকুর রহমান একসময় গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় থেকে তাদের মধ্যে সখ্য সৃষ্টি হয়। ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় তারা বহু নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি মুক্তিপণ চাইনি। মুক্তিপণ চেয়েছে মির্জাপুর থানা পুলিশ। আমি তাদের সহযোগিতা করেছি। তাদের সহযোগিতা করাটাই আমার ভুল হয়েছে।’ অপর অভিযুক্ত মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘কালিয়াকৈর থানার এএসআই মামুনের পরামর্শেই তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সে-ই তাদের কাছে ৩০ লাখ টাকা চেয়েছে।’
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর কালিয়াকৈর থানার ওই এএসআইকে প্রত্যাহার করে গাজীপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জীত কুমার রায় বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। মির্জাপুর থানার ওই এএসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গাজীপুরের পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার বলেন, ‘অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’