দেশের খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রেকর্ডে রাখার মতো সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এই কথা বলেছেন। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সিইসি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ বক্তব্য দেন।
সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করে সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতা ছিল বলেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা সম্ভব হয়েছিল। আগামী উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সংসদ নির্বাচনের মতো পরিবেশ অব্যাহত থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘২০১৮ সালে এই রকম বিরল সুষ্ঠু নির্বাচন উত্তরণে আপনারা ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। একেবারে ধ্বংসপ্রায় অবস্থা থেকে, একটা বিশৃঙ্খলা অবস্থা থেকে সুষ্ঠু অবস্থায় আপনারা নিয়ে এসেছেন। এই জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাদের আবারও ধন্যবাদ। সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে সেই রকমই পরিবেশ অব্যাহত থাকবে।’
সিইসি বলেন, ‘কদিন আগেই আমরা বড় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের সবার মধ্যে তাজা রয়েছে। নির্বাচনে সহিংসতা যাকে বলে, তা ঘটেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যেমন সহিংসতা ঘটেছিল, তা একাদশ নির্বাচনে ঘটেনি। যদিও কয়েকটি ঘটনা পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এসব প্রাণহানির ঘটনায় ইসি মর্মাহত। কিন্তু এগুলোকে নির্বাচনকেন্দ্রিক বলা যাবে না। বেশির ভাগই ঘটেছে ভোটকেন্দ্রের বাইরে। তবুও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্র রেকর্ডে রাখার মতো সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে হয়েছে। এটা আমি দাবি করতে পারি প্রকাশ্যে।’
ঢাকা সিটির নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। সবার প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্বাচনে কার কী দায়িত্ব, তা সবাই জানেন। আপনারা আপনাদের প্রজ্ঞা দিয়ে, দক্ষতা দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু করবেন।’
নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনে জনগণ যাঁকে খুশি তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় প্রতিযোগিতা বেশি হয়। বিশেষত, কাউন্সিলর পদে বেশি প্রার্থী থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। পোলিং এজেন্ট নিয়ে ৯৮ ভাগ অভিযোগের সত্যতা থাকে না। ভোটের দিন অনেক এজেন্ট প্রার্থীর অবস্থা ভালো না দেখলে কেন্দ্র ছেড়ে যান। অনেক দুর্বল প্রার্থী আবার এজেন্টই দিতে পারেন না। এমন বাস্তবতায় ভোট শেষে অনেকে তাঁদের এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন, যা অনেকাংশেই সত্য নয়। প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে না পারেন, সে জন্য নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে থাকতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে প্রতিদিনের প্রতিবেদন ইসি সচিব পর্যালোচনা করে আমাদের জানাতেন। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিতাম। অনেকেই অভিযোগ করতেন, তাঁদের প্রচারণা চালাতে দেওয়া হচ্ছে না, নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা যাচাই-বাছাই করতেন। তবে শেষে অভিযোগগুলো প্রমাণ হতো না। অভিযোগ যদি তথ্যভিত্তিক হয়, সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকে, তাহলে আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’
সভায় ইসির চার কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সেখানে পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।