দেশের খবর: রাজধানীর চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ। মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
শাকিল নেওয়াজ বলেন, আগুন পুরোপুরি নেভেনি। কিছু কিছু জায়গায় এখনও জ্বলছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। বিভিন্ন ক্যামিক্যাল, বডি-স্প্রে, প্লাস্টিক দ্রব্য এসবের কারণে আগুন ছড়িয়েছে। আর সরু রাস্তার কারণে আগুন নেভানোর কাজে সমস্যা হয়েছে।
লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জানান, এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ তারা শনাক্ত করেছেন। সেগুলো তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। আহত ও দগ্ধ ৪১ জন সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর আগে, ভোররাত ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (ডেভেলপমেন্ট) জুলফিকার বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২টি ব্যাগে ১২টি মরদেহ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
৪টা ১০ মিনিটের দিকে মরদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমদ খান এর আগে জানান, রাত ৩টা দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন পর্যন্ত নয় থেকে ১০ জনের মরদেহ বিক্ষিপ্তভাবে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত নয়। এটি বাড়তেও পারে।
এর আগে বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার চুড়ি হাট্টা শাহী মসজিদের সামনে একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে তা আশেপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩২টি ইউনিট চারঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়।
জানা যায়, যে ভবনটিতে প্রথমে আগুন লেগেছে সেটি সাত তলা। নাম- ওয়াহেদ ম্যানশন। ভবনটির নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণের দোকান রয়েছে। ভবনটির পাশের ওয়াহিদ মঞ্জিল, আমানিয়া হোটেল, রাজ হোটেল এবং উল্টা পাশের চারটি বাসায় আগুন ছড়িয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, রাজমহল হোটেলের সামনে একটি পিকআপ ভ্যান দাঁড়ানো ছিল। হঠাৎ ভ্যানটিতে আগুন লেগে বিস্ফোরিত হয়। পাশে সিএনজি অটোরিক্সা ছিল। সেটাও আগুনে পুড়ে যায়। পিকআপ বিস্ফোরণের পর রাজমহল হোটেলে আগুন ছড়ায়। হোটেলের সামনে সিলিন্ডার গ্যাস ছিল। সেগুলো বিষ্ফোরিত হয়। পুরো ভবনে আগুন ছড়ানোর পর পাশের ভবন ওয়াহিদ মঞ্জিলে আগুন লাগে। এই ভবনের নিচে মার্কেট ও ওপরে গোডাউন রয়েছে। বডি-স্প্রে’র দোকান ও প্লাস্টিক দানার দোকান রয়েছে। এক পর্যায়ে ওয়াহিদ মঞ্জির সংলগ্ন জামাল কমিউনিটি সেন্টার ও রাস্তার উল্টো পাশে থাকা দুটি ভবনের চার ও পাঁচ তলায় আগুন ধরে।
তবে অনেকের দাবি, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। প্রথমে একটি ট্রান্সফর্মারে বিকট শব্দ হলে সেখান থেকে আগুন বের হতে দেখা যায়। এই আগুন থেকে রাজমহল হোটেলসহ অন্য ভবনগুলোতে থাকা প্লাস্টিক জাতীয় দাহ্য পদার্থের দোকান ও গোডাউন থেকে আগুন ছড়িয়েছে।