দেশের খবর: ‘চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দায় রাষ্ট্রের কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। নিমতলীর ঘটনার পর কমিটির সুপারিশ মানায় আন্তরিক হলে চকবাজারের ঘটনা ঘটত না, এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না, এটা অবহেলা। একজন দায়িত্বশীল আরেকজনের ওপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন, এটা ঠিক না।’
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এসব মন্তব্য করেছেন।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদন মঞ্জুর করে এ বিষয় করা তিনটি রিট মঙ্গলবার দুপুরে একসঙ্গে শুনানির জন্য ধার্য করেছেন আদালত।
চকবাজারে ভায়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে বিচারিক কমিশন গঠন ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ কয়েক দফা নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করা হয়।
সুপ্রিমকোর্টের চার আইনজীবী আবেদনকারী হয়ে রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক তিনটি রিট করেন।
এসব রিটের ওপর সোমবার হাইকোর্টের এই বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। রাষ্ট্রপক্ষ ও রিটকারী আইনজীবীর উপস্থিতিতে আদালত বিভিন্ন মন্তব্য করেন।
আদালতের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অমিত তালুকদার ও মো. রিয়াজ উদ্দিন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সময়ের আবেদন করেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার খুব আন্তরিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, আগুনে মানুষ পুড়ে মরে তাহলে সিটি কর্পোরেশন কী করে? শুধু আন্তরিক হলে হবে না। কাজ করতে হবে। নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কমিটির যে সুপারিশ ছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে চকবাজারে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। নিমতলীর আগুনের ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী দুই বোনকে দত্তক (ভরণপোষণ) নিয়েছিলেন।
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকার এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আদালত বলেন, আন্তরিক হলে লাভ নেই। মানুষতো চলে গেছে। কাজ তো করতে হবে।
আইনজীবী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই চকবাজারের ঘটনা তদারকি করছেন। আদালত বলেন, উনি তো (প্রধানমন্ত্রী)একা দেশ চালাতে পারবেন না। এই যে সুপারিশ, এগুলো তো বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্ব।
আদালত আরও বলেন, ওই সব এলাকার বাড়ির মালিকরা তিন গুণ বেশিতে গোডাউন ভাড়া দেন। আর নিজেরা থাকেন গুলশানে। মারা যায় গরিব মানুষ। সিটি কর্পোরেশন দেখেও না দেখার ভান করে। যারা রাস্তায় মারা গেল তাদের কী দোষ?
আদালত বলেন, পত্রিকায় দেখেছি- সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এটা বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা জানি না তারা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা। পদক্ষেপ না নিলে ধরে নিতে হবে তাদের অবহেলা ছিল। পুরান ঢাকার রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যেতে পারে না। পাঁচ থেকে ছয় মাত্রার ভ‚মিকম্পে না হয় কিছু হবে না। কিন্তু সাত থেকে আট মাত্রায় ভ‚মিকম্প হলে কোনো বিল্ডিং থাকবে না। এ ধরনের ভ‚মিকম্প হলে কাউকে উদ্ধার করারও কেউ থাকবে না।
চকবাজারের আগুনের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে আদালত বলেন, এটাকে দুর্ঘটনা বলা যাবে না। এটা অবহেলা। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। একজন দায়িত্বশীল আরেকজনের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন, এটা ঠিক না। আমাদের অর্থনীতিতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা দেশের ভাব মর্যাদা নষ্ট করে দিচ্ছে।
নিমতলীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলোর উল্লেখ করে আদালত বলেন, গভর্নমেন্টকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। নিমতলীর ঘটনার পর কিছুটা বাস্তবায়ন হলে এই ঘটনা ঘটত না।
এরপর আদালত এ সংক্রান্ত সব রিট একসঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর দু’টায় শুনানি করবেন বলে জানান।
গত রোববার সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ বিষয়ে পৃথক পৃথক রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ, অ্যাডভোকেট অমিত দাস গুপ্ত, ব্যারিস্টার নূর মোহাম্মদ আজমী এবং খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার ও সাগুফতা তাবাচ্ছুম।
আবেদনে হতাহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউন এবং কারখানা অপসারণ ও বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত করা গ্যাস সিলিন্ডার অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি নিমতলী ট্র্যাজেডির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬৭ জন।