দেশের খবর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কারসহ চার দফা দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষকে আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। পাশাপাশি আগামী সোমবার পর্যন্ত সব ধরণের কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণাও দেন তিনি। বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে উপাচার্যের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠকের পর সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের ডেকেছিলেন এবং তিনি বিচার করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম, সোমবার আমরা পর্যন্ত দেখবো, সেজন্য কর্মসূচি স্থগিত করেছি’। এ সময় এসএম হলে মারধরের শিকার ফরিদ হাসানও সেখানে ছিলেন।
নুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপাচার্য আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ‘গতকালকের ঘটনায় হলের প্রভোস্ট তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি তাদের বলেছি, কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে। কেউ অন্যায় করে যাতে পার না পায়, সে বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করবো’।
এর আগে গত মাসে অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনের সময় এসএম হলে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও শেষ মুহূর্তে তা প্রত্যাহার করেন ফরিদ হাসান। পরে গত সোমবার রাতে তাকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন মঙ্গলবার বিকালে এসএম হলের প্রধ্যাক্ষকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ছাত্রলীগ এবং হল সংসদের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ভিপি নুর। এমনকি এ সময় তাদের দিকে ডিমও ছোড়া হয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় এসএম হল থেকে ফিরে ভিসির বাংলোর সামনে অবস্থান নেন ভিপি নুর ও তার সহকর্মীরা। তার সঙ্গে সেখানে ছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন খাঁন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ডাকসুর ভিপি পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া অরণি সেমন্তি খান।
ভিসির বাংলোর সামনে অবস্থানের প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান অবস্থান নিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে ভিসি লাউঞ্জে যান অবস্থানকারীরা। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা উপাচার্যের সেঙ্গ বৈঠক করেন নুরসহ অন্যান্যরা। বৈঠকে এসএম হলের ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কারসহ চার দফা দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষকে আগামী সোমবার পর্যন্ত কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দেন তারা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগের কবল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে মুক্ত করা, অছাত্র ও বহিরাগতদের তাড়াতে হলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা এবং নিয়মিত ছাত্রদের হলের সিটগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া।
বৈঠকের পর সোমবার রাতের ঘটনার বিষয়ে নুর বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে হল সংসদের জিএস প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনের আগে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের পরে হলে ফিরে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সোমবার রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে আবারও মেরে হল থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে তিনি হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছি’। এ সময় ভিপি নুরে সঙ্গে এসএম হলে গিয়ে হেনস্তার শিকার হওয়া শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, ‘যদি এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার না হয়, তবে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে’।