শেখ তহিদুর রহমান/হাসান হাদী : দেশের সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান শিশুরা ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করুক। আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়ার যেগ্যতা অর্জন করুক, গণতন্ত্রের চর্চার মধ্যে বেড়ে উঠুক। তাই তিনি দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের কর্মসূচি চালু করেছেন। অথচ সাতক্ষীরা জেলার তার কর্মসূচির প্রতি ওদাসীন্য রীতিমত চমকে ওঠার মত!
নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল ২৩ ফেব্রয়ারি সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন। অথচ সাতক্ষীরা জেলার কিছু কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ স্কুলেই এ নির্বাচনী কার্যক্রম ছিল না।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ১৭ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি প্রত্যেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের এসএমসিকে বিষয়টি অবহিত করার কথা। ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে অবহিতকরণ সভা, ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠন, ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন পত্র আহ্বান, ১৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন জমা, ১৮ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাই ও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে ১ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণার কথা। প্রজ্ঞপনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ১ সপ্তাহের মধ্যে ছাত্র সংসদের অধিবেশন আহ্বান করতে হবে। তবে এ সিডউল অনুযায়ী জেলার অধিকাংশ স্কুলে হয়নি নির্বাচন। অনেক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন কিছুই বলতে পারেননি। বদলি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে অভিযুক্ত সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাক আহমেদ তো প্রথমে এবিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি! পরবর্তীতে তিনি বলেন অনেক স্কুলে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার কাছে এ প্রতিবেদক নির্বাচন হয়েছে, সদর উপজেলার এমন ৫টি স্কুলের নাম জানতে চাইলে তিনি মাত্র দুটি প্রাইমারি স্কুলের নাম বলতে পারেন!
আশাশুনি উপজেলার গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাদাকাটি হিন্দুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীউলা কলিমাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুঁইজালা সরকারি, বড়দল চাম্পাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুধহাটা কুন্দড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দরগাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এর একটিতেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরার চাদনীমুখা পুর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িগোয়ালিনি আড়পাঙ্গসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটুলিয়া সোয়ালিয়া সাপেরদুনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তালা উপজেলার কোন কোন বিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়েছে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিউল্লাহ সবুর হয়নি বরং পাটকেলঘাটার একটি বিদ্যালয়ের পিকনিকের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। এছাড়া কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলার অবস্থাও একই। বেশিরভাগ স্কুলেই অনুষ্ঠিত হয়নি নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরি অন্যতম কর্মসূচি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল। কিন্তু জেলার অধিকাংশ স্কুলে একটি সম্পন্ন না হওয়ায় তার কর্মসূচির প্রতি শিক্ষা কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হলো।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো: মহিউদ্দীন জানান, তিনি জানতেন না নির্বাচন হয়নি। তবে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন বিষয়টি।
জেলা শিক্ষা অফিসার অহিদুল ইসলাম জানান, ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন না হওয়ার কোন সুযোগ নেই। স্থানীয়ভাবে কেউ যদি নেগলিজেন্স দেখিয়ে থাকে তবে আমরা ব্যবস্থা নেব। আর প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব এটি সম্পন্ন করা এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব তা মনিটরিং করা। এক্ষত্রে যদি কারও গাফিলতি থাকে তবে তা খতিয়ে দেখা হবে।