মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের দু’টি পরিবর্তন এসেছে। সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকন) সম্মেলনের পরিবর্তে জাতীয় কাউন্সিল করার বিধান যোগ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২৭ বছর পর পুনরায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ যুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত দলের গঠনতন্ত্রের ৬০তম সংস্করণে এই দু’টি পরিবর্তনা আনা হয়েছে। দলটির সংশোধিত গঠনতন্ত্র পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের পরে জামায়াতের কোনও সম্মেলন হয়নি।
২০১৫ সালের জুনে গঠনতন্ত্রের ৫৯তম মুদ্রণ ধারা-১৩-এ বাংলাদেশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় সংগঠন হিসেবে ‘কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকন) সম্মেলন’ ছিল। যদিও সর্বশেষ সংস্করণে বলা হয়েছে, জাতীয় কাউন্সিল। এরপর ধারা ১৪-এ বলা হয়েছে, ‘জাতীয় কাউন্সিল জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম হিসেবে গণ্য হবে। জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যদের সরাসরি গোপন ভোটে আমিরে জামায়াত নির্বাচিত হবেন।’ দলের গঠনতন্ত্রের ধারা-১৪-এর-৩-এ কে কে জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য হবেন, এ বিষয়ে বিবরণ রয়েছে। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ৭৩টি ধারা রয়েছে। এর আগে ধারার সংখ্যা ছিল ৭০টি।
সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে—‘জাতীয় কাউন্সিলের সভাপতি হবেন আমিরে জামায়াত। এই কাউন্সিলের মেয়াদ তিন বছর।’ জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, ‘গত বছরের শেষদিকেই কেন্দ্রীয় সদস্য (রুকনরা) ভোটে গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে মত দিয়েছেন। এরপর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ চূড়ান্ত করে।’
১৯৯০ সাল পর্যন্ত জামায়াতের গঠনতন্ত্রে সাংগঠনিক সম্পাদক পদটি ছিল বলে জানান নির্ভরযোগ্য এক নেতা। তিনি বলেন, ‘এ হিসেবে প্রায় ২৭ বছর পর সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ফিরিয়ে আনলো জামায়াত। নতুন গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি পদ তৈরি করা হয়েছে।’
২০১৫ সালের সর্বশেষ গঠনতন্ত্রের সংস্করণের ধরা-২৮-এ বলা ছিল, বিভাগীয় সেক্রেটারিগণ আমিরে জামায়াতের নির্দেশমতো নিজ নিজ বিভাগের কাজ পরিচালনা করবেন। এই কাজের ব্যাপারে আমিরকে পূর্ণ তথ্য দেবেন। নতুন গঠনতন্ত্রে এ বিষয়টি হুবহু থাকলেও নতুন ধারায় তৈরি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি হিসেবে।
ধারা-৩০-এ বলা হয়েছে, ‘জামায়াতের আমিরের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি নিয়োগ করতে পারবেন। আরও বলা হয়েছে, আমিরের দেওয়া দায়িত্ব পালন করাই হবে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারিদের কর্তব্য। আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারিরা যদি কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য না হন, তাহলে তিনি পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য হবেন। এই ধারায় যুক্ত করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদকের শপথের বিষয়টিও। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি নিযুক্তির পর তিনি আমিরে জামায়াত বা তাহার প্রতিনিধির কাছে শপথ গ্রহণ করবেন।’
এদিকে নতুন গঠনতন্ত্রের সঙ্গে পাল্টে গেছে জামায়াতের নতুন ওয়েবসাইটও। এই সাইটে দলটির সব ধরনের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আঞ্চলিক পরিচালকের স্থলে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে কে হয়েছেন তা বলতে পারব না।’