ভিন্ন স্বাদের খবর: শেষ হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ৩৩ ওয়ার্ডে জয়ের হাসি হেসেছেন সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৪৪ জন কাউন্সিলর। কিন্তু ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে জয় পাওয়া শীতল সরকারের (৬৫) হাসিটা একটু অন্য রকম। তিনি জয়ের স্বাদ পেয়েছেন দীর্ঘ ৩৮ বছর পর।
এতদিনে খুইয়েছেন টাকা-পয়সা। হারিয়েছেন স্ত্রী-সন্তানকে। তবে যাবার আগে স্ত্রী বলে গিয়েছিলেন, ‘কোনো দিন যদি তুমি নির্বাচন করে পাশ করতে পারো আমাকে আনতে যেও।’
জানা যায়, ২৭ বছর বয়সে ১৯৮১ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচনে কমিশনার পদে নির্বাচন শুরু করেন শীতল সরকার। দীর্ঘ ৩৮ বছরে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ৭ বার। বরাবরই তিনি থেকেছেন দ্বিতীয় স্থানে। অবশেষে প্রথম সিটি নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন। গত রবিবার অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে টপকে দুই হাজার ২৬১ ভোট পান তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ১৯৯৮ সালে লক্ষী সরকাররের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন শীতল সরকার। এর বছর খানেক পরই নির্বাচন হয় ময়মনসিংহ পৌরসভার চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে। তখন লক্ষী সরকার অন্তঃসত্ত্বা। ওই নির্বাচনেও হেরে যান শীতল সরকার। সেই সাথে একের পর এক নির্বাচনে অংশ নিয়ে খোয়ান টাকা-পয়সাও। সব মিলিয়ে স্ত্রী গর্ভের সন্তানকে নিয়ে চলে যান নিজ বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়িতে।
শীতল সরকারের এই গল্পটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল। স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস হচ্ছে ফেসবুক ওয়ালে ওয়ালে। মন্তব্যে লাইন গুলোও দীর্ঘ হচ্ছে।
আলী ইউসুফ নামের একজন নিজের ফেসবুক ওয়ালের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বার বার পরাজয় বরণ করে সংসারের সর্বস্ব খুয়ানোর জন্য শীতল বাবুর স্ত্রী তার দুই সন্তানকে নিয়ে চলে যান বাবার বাড়িতে অনেক আগেই। যাওয়ার সময় তার স্ত্রীর গর্ভে থাকা সন্তানটি এখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। এরপর থেকে শীতল সরকার শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্যই লড়ছেন না। দীর্ঘদিন তিনি সংগ্রাম করছেন স্ত্রী সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য।’
সাদিয়া জামান নামের একজন লিখেছেন, রবার্ট ব্রুসের কথা উঠলেই আপনার-আমার মনে চলে আসে মাকড়শার গল্প, তাই না? ছোটবেলায় পড়ে আসা গল্পটি দিয়ে আমরা চিনেছিলাম অধ্যবসায়ের অবতার হিসেবে স্কটিশ বীর রবার্ট ব্রুসের কথা। গল্পে পড়া রবার্ট ব্রুস নয়, আজ আমার সাথে দেখা হয়েছে একজন সত্যিকারের অধ্যবসায়ের অবতারের সঙ্গে……..।’
এবার কি ফিরবেন স্ত্রী-সন্তান? মুঠোফোনে এমন প্রশ্ন ছিল শীতল সরকারের কাছে। স্বভাব-সুলভ ভাবেই বললেন, ‘অহন সব ঠিক হইয়া যাইবো। বউ আইবো, সন্তানও আইবো। বউ তো যাওয়ার সময় কইয়া গেছিল আমি নির্বাচনে জিতলে আইবো।’