বিশেষ ডেস্ক: পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন আজ (বুধবার)। রহমত, বরকত আর নাজাতের বারতা নিয়ে দীর্ঘ ১১ মাস পর ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ঘরে ঘরে আবার এসেছে এই সিয়াম সাধনার মাস। সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ সংযম। সেই অনুযায়ী এ মাসটি এসেছে পানাহার ও কামাচারসহ পার্থিব সবকিছু থেকে মুসলমানদের সংযম পালনের জন্য, যাকে আমরা রোজা বলে থাকি। ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির অন্যতম হলো রোজা।দিনব্যাপী পানাহার বন্ধের মধ্য দিয়ে সংযম আর আত্মশুদ্ধির এই চর্চা চলবে মাসব্যাপী।
সোমবার সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় শুক্রবার থেকে রমজান শুরুর সিদ্ধান্ত জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সে অনুযায়ী এদিন থেকেই রোজা পালনের জন্য এশার নামাজের পাশাপাশি তারাবির নামাজেও শরিক হন মুসল্লিরা। ভোররাতে সেহরি খেয়ে মঙ্গলবার থেকে রোজা পালন শুরু হচ্ছে। মসজিদে মসজিদে তারাবি জামায়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আজকের দিনের ইবাদত।
মানুষের বৈষয়িক প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষা এবং সব ধরনের লোভের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করাই সংযম। এ মাসে যেখানে দরিদ্রের না খেয়ে থাকার কষ্ট, বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সম্পদ না থাকার কষ্ট বোঝার সাধনা করার কথা, সেখানে যদি ব্যবসায়ীরা কেবল বেশি মুনাফার লোভে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন, এই অসততা মেনে নেয়া যায় না। খাদ্যাভ্যাসে সংযমের পরিবর্তে আমরা দেখি ইফতারের বাজারের রমরমা বাণিজ্য; এতো চটকদার ইফতার আয়োজন কোনোভাবেই সংযমের পরিচয় বহন করে না। আর ভেজাল ও ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে সেসব খাবারকে বাহারি ও সুস্বাদু করার যে প্রবণতা ইফতারি বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা যায়, তা রোজাদারদের সঙ্গে কেবল প্রতারণাই নয়, রীতিমতো অপরাধ। আমরা ধর্মকে ভয় হয়তো পাই, কিন্তু ধর্মের শিক্ষা গ্রহণ করি না।
নিজেদের আমরা ধর্মপ্রাণ ভাবতে পছন্দ করি, কিন্তু ধর্ম প্রকৃত উপায়ে পালন করি না, বাস্তব জীবনে চর্চা করি না। আমাদের দেশের ধর্মীয় নেতাদের উচিত এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা; তারাই পারেন সাধারণ মানুষকে ধর্মের প্রকৃত বার্তা বুঝতে সহযোগিতা করা। প্রকৃত বার্তা গ্রহণ না করে আমরা যদি ধর্মের ব্যাপারে কেবল আচার-সর্বস্ব থেকে যাই, তাহলে সমাজ থেকে অন্যায়-অনাচার আর ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করা কঠিনই হবে। তাই রমজানের এ মাসে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয়েই প্রকৃত অর্থে সংযম সাধন করবেন আন্তরিকতার সাথে, আমাদের প্রত্যেকের এমনটিই হোক উদ্দেশ্য।
পবিত্র রমযান মাস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বানীতে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে রমজানের মোবারকবাদ জানান। তিনি রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য্য ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রমজানের মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অকল্যাণকর কাজ পরিহার করতে হবে সবাইকে। একইসঙ্গে দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট-যন্ত্রণা উপলব্ধি করতেও সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে মাসব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, ইফতার মাহফিল ও ইসলামী বইমেলাসহ নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে রমজান উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ১ হতে ২৫ রমজান পর্যন্ত বয়স্কদের জন্য বোগদাদী কায়দায় কোরান শিক্ষা দেয়া হবে। এদিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে ১ রমজান থেকে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। মাহে রমজানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ সাহানে মাসব্যাপী হালাল পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
মঙ্গলবার প্রথম রোজায় সাতক্ষীরায় ইফতারের সময় বিকেল ৬টা ৩৭ মিনিটে। দ্বিতীয় রোজার জন্য সেহরির শেষ সময় দিনগত রাত ৩টা ৫৯ মিনিট। ফজর ওয়াক্ত শুরু হবে রাত ৪ টা ২ মিনিটে।