খেলার খবর: বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত সূচনা করেছে বাংলাদেশ। টপ ও মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তার পর বোলারদের দায়িত্বশীলতায় ২১ রানের উড়ন্ত জয় এনে দিয়েছে টিম টাইগার্স। সেমিফাইনালে যাওয়ার যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন মাশরাফীরা, সেই পথে প্রথম সিঁড়িটি পার হয়েছে লাল-সবুজরা।
রোববার লন্ডনের কেনিংটন ওভালে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রানে আটকে যায় সাউথ আফ্রিকার ইনিংস।
ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই সেরা দল হিসেবে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের ভয়-ডরহীন ব্যাটিং বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর দায়িত্বশীল ব্যাটিং পরে বড় পূঁজি দেয় গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালিস্টদের।
ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া সেরা টার্নিং পয়েন্টটা ছিল আসলে সাকিব-মুশফিকের মধ্যকার ১৪২ রানের রেকর্ড জুটি। যা বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের ভিত এনে দেয়। সেই ভিতের উপর দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকরা দলকে মজবুত অবস্থানে নিয়ে যান। তবে সৌম্য সরকারের আক্রমণাত্মক শুরু, ডেথে মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং, স্মরণীয় জয়ের পথে পথে বাঁক বদলের সহায়ক হয়েছে।
দেখে নেয়া যাক এমন পাঁচটি কারণ, যা বাংলাদেশের জয়ের পথে আলাদাভাবে ছাপ রেখেছে-
ভয়-ডরহীন সৌম্য: শুরুতেই ঝড় তুলে সাউথ আফ্রিকান বোলারদের মনোবল ভেঙে দেন সৌম্য। অন্য প্রান্তে তামিম রক্ষণাত্মক থাকলেও সৌম্য ছিলেন আক্রমণাত্মক। তার ভয়-ডরহীন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে প্রোটিয়ারা। ঝড় তুলে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি এ বাঁহাতি। ৩০ বলে ৯টি চারের সাহায্যে ৪২ রান করে আউট হন। তবে এ হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান শুরুতে যে টিউন সেট করে দিয়ে যান, সেটির উপর দাঁড়িয়ে সাউথ আফ্রিকান বোলারদের শাসন করা খানিকটা সহজ হয়ে যায় বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য!সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি: সাকিব-মুশফিক যখন জুটি বাঁধেন, তখন বাংলাদেশের স্কোর ২ উইকেটে ৭৫। এই সময় আরেকটি উইকেটের পতন হলে ছন্দহীন হয়ে পড়তে পারত বাংলাদেশ। তবে এ দুজন সাবলীলভাবে ব্যাট করে ১৪২ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে টাইগারদের শক্তিশালী ভিত এনে দেন। যেটি পরে বাংলাদেশের জয়ের পথ বাতলে দেয়।মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং: শেষদিকে দ্রুত সাকিব, মিঠুন ও মুশফিককে হারিয়ে ছন্দপতন ঘটতে যাচ্ছিল বাংলাদেশের। রান তোলার গতিও কমে আসে সেসময়। তখন অসাধারণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক। যে জুটি উইকেট ধরে রেখেও রানের গতি বাড়িয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহ ৩৩ বলে ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন। অন্যদিকে মোসাদ্দেক করে যান ২০ বলে ২৬ রান। দল পেরিয়ে যায় তিনশর কোটা।বোলিংয়ে হাল না ছাড়ার মানসিকতা: ইংল্যান্ডের পিচে ৩৩০ রান তাড়া করা ততটা কঠিন কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের বোলাররা শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক। বোলাররা কখনোই ম্যাচের লাগাম হাতছাড়া হতে দেননি। প্রোটিয়ারা জুটি গড়ার চেষ্টা করতেই আঘাত হেনেছেন টাইগাররা। কয়েক ওভার দ্রুত রান উঠলে বা জুটি হতে দেখলেই মুষড়ে পড়েননি তারা। ফলে জয় নিয়ে কখনো শঙ্কা জাগেনি। পুরো ইনিংস জুড়েই চনমনে এই শারীরিক ভাষা মাশরাফীর দলের লক্ষ্য-ভাষাটা নির্ধারণ করে দেয়।ডেথে মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনের দৃঢ়তা: হাই-স্কোরিং ম্যাচে ডেথ ওভারগুলোই ভাগ্য গড়ে দেয়। ব্যাটসম্যানদের যেমন রান আনতে হয় সময়টাতে, বোলারদের হতে হয় কম খরুচে। ডেথ ওভারগুলোতে বাংলাদেশের বোলারদের খেই হারিয়ে ফেলার পুরনো অভ্যাস রয়েছে। তবে এদিন বেশ দৃঢ়তা দেখিয়েছেন মোস্তাফিজ ও সাইফউদ্দিন। প্রথমে সাইফের জোড়া আঘাত কোণঠাসা করে ফেলে সাউথ আফ্রিকাকে। পরে ক্রিস মরিস ও জেপি ডুমিনিকে আউট করে দুশ্চিন্তার শেষ রেখাটুকুও দূর করেন মোস্তাফিজ। সঙ্গে তারা প্রতিপক্ষের রান তোলায় দেন লাগাম। তাতে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ের ক্যানভাসে রং-তুলির শেষ আঁচড়া আসে সুনিপুণভাবেই।