নিজস্ব প্রতিবেদক : কাল সেই ভয়াল ৬ সেপ্টেম্বর। ২০১৩ সালের এই দিনে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্যাহ আমানকে। এদিন সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিএনপির এক কর্মী সমাবেশে তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নির্দেশে তার কর্মী সমর্থকরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে আমানকে। ওরা সেদিন খুন করতে চেয়েছিলো তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলীকে। কিন্তু ইফতেখার আলীকে বাঁচাতে গেলে হাবিবের সন্ত্রাসী বাহিনী হিংস্র হায়েনার মত অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে আমানের উপর। দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনটি বছর। আমান হত্যার প্রধান আসামী সেই হাবিবুল ইসলাম হাবিব আজো পলাতক। অথচ তাকে মাঝে মাঝে টেলিভিশনে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যায়। জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা আমানউল্যাহ আমানের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে আমান হত্যার বিচার বাস্তবায়ন কমিটি।
সূত্র জানায়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের তারিকুল হাসান খুলনায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করত। সেখানে মামলা হওয়ার পর সাতক্ষীরায় আসে এবং হাবিবের ছত্রছায়ায় পূর্বের ন্যায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঘটনার সময় গডফাদার হাবিব-নান্টা বলেছিল, ইফতেখারকে আলতাফ বানিয়ে দে। বিক্ষুদ্ধ জনতা খুনি হাবিব-নান্টার ফাঁসির দাবি জানিয়ে তাদের কুশপুত্তলিকা বানিয়ে দাহ করেছিলো। এদিকে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান হত্যা মামলায় সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম ও জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল হাসানসহ ৯০ জনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ঘটনার ১৪ মাস পর ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। কিন্তু অভিযোগপত্রটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় ২০১৫ সালের ৬ জুন সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন আদালতে। চার তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে ২০১৪ সােেলর ১৬ অক্টোবর তিনি মামলাটির দায়িত্ব পান উপপরিদর্শক আবুল কাসেম। ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন সাতক্ষীরা আদালতের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে আদালতে জমা দেন আবুল কাসেম। মামলার এজাহারভুক্ত ৭৬ জন আসামিসহ ৮৯জন বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। সাক্ষী করা হয়েছে ৫১ জনকে। অন্য আসামিদের মধ্যে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম, সদস্যসচিব কামরুজ্জামান, সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির সাধারণ শেখ মাসুম বিল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মো. কামরুজ্জামান, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মাস্টার, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস ছাত্তার, কলারোয়া যুবদলের সভাপতি আবদুর কাদের ও কলারোয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশরাফ হোসেনের নাম রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা শহীদ আবদুর রাজ্জাকের শিল্পকলা একাডেমী ভবনে তৎকালীন জেলা বিএনপির কর্মিসভা হয়। সভায় সভাপতি হাবিবুল ইসলাম পক্ষের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইফতখোর আলী পক্ষের সাধারণ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা দা, হাঁসুয়া, রড, হাতুড়ি ও লাঠি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মারপিট করে। হামলা চালানো হয় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইফতেখার আলীর ওপর। তাঁকে রক্ষা করতে গেলে জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানকে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে খুলনায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। হামলায় আরও ১২ জন নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হন। এ ঘটনায় আমানের মা ফাতেমা খাতুন ঘটনার রাতেই পৃথক এজাহারে ৭৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে সম্পূরক এজাহারে আরো ১৪জনকে আসামী করা হয়। আমান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে দাখিল করা হয়। এরপর মামলাটি (এসআইসি ২৪৭/১৬) জজকোর্টে শুনানীর অপেক্ষায় আছে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মামলাটির ধার্যদিন রয়েছে বলে জানায় সূত্র।
পূর্ববর্তী পোস্ট