খেলার খবর: বিশ্বক্রিকেটের একসমযের পরাশক্তি ক্যারিবিয়দের আগের ধার আর নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুখোমুখি দেখায় সবশেষ নয় ম্যাচের সাতটিতে জয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। তাই এ ম্যাচে খাতাকলমে, টাইগাররাই ফেভারিট। তামিম ইকবাল তো নিজেদের ফেভারিট বলেই দাবি করছেন। প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক জেসন হোল্ডারও মনে করেন সেটি।
খাতাকলম আর মাঠের হিসাব অবশ্য আলাদা। কারণ বিশ্বকাপের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে দুই দলকেই জিততে হবে। দুই দলের জন্যই ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। সেমিফাইনালের আশা টিকিয়ে রাখতে হলে জয়ের বিকল্প আর কিছুই নেই। আজকের ম্যাচে খেলতে নামার আগে দুই দলই একই সরলরেখায়। একটি করে জয়, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত, দুই ম্যাচে হার। পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে যাওয়ার এটিই দারুণ সুযোগ। কাজেই যারা ভালো খেলবে জয় ধরা দিবে তাদের মুঠোয়।
বিশ্বকাপের মঞ্চে ক্যারিবীয়দের চ্যালেঞ্জ দেখছেন মাশরাফি বিন মোর্তজা। টাইগার অধিনায়ক মনে করেন, সেরাটা খেললেই কেবল জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যাবে। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হয়তো পেছনের সাফল্য প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে আপনি একেকদিন একেক দলের বিপক্ষে খেলছেন। ফলে, একইরকম মানসিকতা থাকে না। তাই এভাবেই চিন্তা করতে হবে। উইন্ডিজ দল যেকোনো ধরণের ড্যামেজ করতে পারে। আমাদের সেরাটাই খেলতে হবে। আগের ৯ ম্যাচে ৭টা জিতেছি। এর মানে এই নয় যে আমরা এখানেও সহজেই জিতে যাবো।’
বাংলাদেশ-উইন্ডিজ ম্যাচের ভেন্যু অন্যান্য মাঠের চেয়ে ছোট। ক্যারিবীয় ব্যাটিং শক্তির সামনে টাইগার বোলারদের জন্য হয়ে উঠতে পারে চ্যালেঞ্জিং। তবে মাঠের আয়তনের ব্যাপারটি ইতিবাচক-নেতিবাচক দুটিই হতে পারে বলে মত মাশরাফির। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঠ ছোটো হওয়াতে সুবিধা অসুবিধার কিছু নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যত বড় মাঠেই খেলুক না কেনো, ওদের মিস হিটেও কোনো সময় ছয় হয়ে যায়। আমার কাছে মনে হয় এখানে ৬ হলে তো ১২ হবে না! ছয়ই কাউন্ট হবে। আমরা ইতিবাচকভাবে যেটা নিতে পারি, আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্যও সুবিধা কিছুটা বাড়বে। আমাদেরও এই সুযোগগুলো থাকবে। তাই এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি থাকবে। এক্ষেত্রে যেগুলো ফিফটি ফিফটি চান্স, এগুলো ৬ হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে গেলে বোলারদের চ্যালেঞ্জই বেশি হয়। দুই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা যায়। যত ইতিবাচকভাবে দেখা যায় ততই ভালো। আমাদের কোনো না কোনো উপায় খুঁজতে হবে, তাদের বিপক্ষে কিভাবে সফল হতে পারি। ব্যাটসম্যানদের কথা বলতে গেলে মাঠ ছোটো বড় থাকার কারণে সবাই তো সীমানার কাছে আউট হয় না। স্লিপে আউট হয়, বোল্ড হয়, সবই আছে। এগুলো মাথায় থাকতে হবে। দুই দলই যখন শট খেলবে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।
বিশ্বকাপের গত তিন ম্যাচে অপরিবর্তিত ছিল বাংলাদেশের একাদশ। টন্টনের ছোট মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে আসতে পারে একাধিক পরিবর্তন। স্পিনার কমিয়ে পেসার বাড়ানো হবে নাকি বাড়তি একজন ব্যাটসম্যানকে খেলানো হবে, সেটি নিয়ে চলছে দলের মধ্যে আলোচনা।একাদশ নির্বাচনে ভাবনায় রাখা হচ্ছে মাঠের আয়তনও। এমনও হতে পারে রুবেলকে দলে নিতে বাদ দেয়া হবে আরেক পেসারকে। অধিনায়ক মাশরাফী তো খেলবেনই। সাইফউদ্দিন খেলছেন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। বাকি রইল মোস্তাফিজুর রহমান! কাঁধে চোট থাকায় বোলিং করতে পারছেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার অভাব অবশ্য পুষিয়ে দিচ্ছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দলের মূল অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আর বাঁহাতি স্পিনে ভরসা সাকিব আল হাসান। পাশাপাশি চোট কাটিয়ে মুশফিকুর রহিম দ্রুত মাঠে ফেরায় স্বস্তিতে বাংলাদেশ। রোববার মাঠে নেমে ফিল্ডিং, কিপিং আর ব্যাট হাতে হালকা ড্রিল করেছেন। পরে ইনডোরে নিজস্ব পরিকল্পনায় ব্যাটিং করেছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
ম্যাচের আগেরদিন অনুশীলনে গুরুত্ব পান একাদশের জন্য বিবেচনায় থাকা খেলোয়াড়রা। তাদের ব্যাটিং-বোলিং সেশন আর শারীরিক ভাষায় অনেকটা প্রতিফলিত হয় কারা থাকছেন একাদশে। সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নামার আগেরদিন বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে প্রথম তিন ম্যাচে একাদশের বাইরে থাকা লিটন দাস ও রুবেল হোসেন পেলেন গুরুত্ব। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সোমবারের ম্যাচে তাদের খেলার সম্ভাবনা আছে অনেকটাই।