খেলার খবর: শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের শর্ট বলটিকে যখন খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে পুল শটে বাউন্ডারিতে পাঠালেন, তখন খুশির বান নামল চারপাশে; নামারও কথা, এ যে বিশ্বকাপে স্মরণীয় এক জয়ের মুহূর্ত এনে দেওয়া শট…। কিন্তু রেকর্ডগড়া জয়োৎসবের মাঝে ক্ষণিক মুহূর্তেই মনে উদয় ঘটল আনন্দময় এক আফসোসের। ইস, উইন্ডিজ যদি আর ক’টা রান বেশি করত!
উইন্ডিজ যদি আর ক’টা রান বেশি করত, তাহলে লিটন দাস হয়ে যেতে পারতেন বিশ্বকাপ অভিষেকে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান, হয়ে যেতে পারতেন চলতি বিশ্বকাপের নবম সেঞ্চুরিয়ান, পেয়ে যেতে পারতেন নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, হয়ে যেতে পারত দ্রুততম সেঞ্চুরিটাও। কিন্তু উইন্ডিজের ভাণ্ডারে ছিল ৩২১ রান, সেই রানে পৌঁছানোর পথে লিটন পৌঁছাতে পারলেন ৯৪ রান পর্যন্ত। ৬৯ বল খেলা ইনিংসটায় আটটি চার আর চারটি ছয় তো এরই মধ্যে হাঁকিয়েও ফেলেছেন। আর কিছু রান করার সুযোগ থাকলে একটা ছয় মারতেই পারতেন। আক্ষেপটা তাই কম নয়- আর তো মাত্র ছয়টা রান!
কিন্তু খানিক অপ্রাপ্তির আফসোস নয়, টনটনে লিটনের দিনটা ছিল আসলে পূর্ণ প্রাপ্তির, কিংবা তারও বেশির। যে ব্যাটসম্যান ফর্মে থাকার পরও টানা তিন ম্যাচে একাদশে সুযোগ পান না, ওপেনার হওয়ার পরও জায়গা না পাওয়ায় যাকে পাঁচ নম্বরে নেমে যেতে হয়- তার জন্য বিশ্বকাপে দেশের স্মরণীয় এক জয়ে বড়সড় অবদান রাখা, চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানের জুটিতে যুক্ত থাকা, দাপুটে শটে জয়ের মুহূর্ত এনে দেওয়া- এ যে ভাবনার চেয়েও বেশি কিছু। অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংসটি তাই লিটনের ক্যারিয়ারের অন্যতম এক মাইলফলকই হয়ে থাকার কথা বাকি জীবন।
সোমবার অন্যের ব্যর্থতায় সুযোগ পাওয়ার মানসিক চাপ এবং মিডল অর্ডারে অনভ্যস্তের ব্যাটিংয়ে যখন খেলতে নামেন, দলের স্কোরবোর্ডে তখন ৩ উইকেটে ১৩৩ রান। ৩২২ রানের বড় লক্ষ্য পানে ছুটতে গিয়ে ততক্ষণে ফিরে গেছেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞরা। আর কোনো বিপর্যয় যেন না ঘটে, সেটিই তখন মুখ্য। স্বভাবজাত শট খেলার প্রবণতায় তাই লাগাম টানলেন। সাকিব আল হাসানকে সঙ্গ দিতে প্রথম আট বলে নিলেন মাত্র চারটি সিঙ্গেল। তবে ব্যাটিং সত্তায় যে সক্ষমতা, সেটি একসময় ঠিকই বেরিয়ে আসে। আন্দ্রে রাসেলের শরীর তাক করে ছোড়া বল পুল শটে পাঠিয়ে দেন মিড উইকেট বাউন্ডারিতে। এর পরও যে হাত খুলতে শুরু করেন, তা নয়। ইনিংসের ৩১ ওভার শেষে দলের রান যখন ২১৫, তার রান তখন ২৮ বলে ২৩। বল-রানের দৌড়ে বলকে পেছনে ফেলেন ৩২তম ওভারে ক্রিস গেইলের ওভারে, পাঁচ বলের মধ্যে হাঁকান দুটি চার। পরের ওভারে শেলডন কটরেলের শর্ট বলকে আপার এজে বানান ছক্কা। কটরেলেরই পরের ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে পৌঁছে যান ২৮ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে, ৪৩ বলে। ৩৮তম ওভারে কটরেল যখন ফের বোলিংয়ে আসেন, তখন টানা তিন বল পাঠান গ্যালারিতে- ৬, ৬ এবং ৬। ভারতের সাবেক পেসার রুদ্র প্রতাপ সিং তখন টুইট করেন, ‘৬ ছক্কা হয়ে যাবে নাকি? লিটন অতটা মাথায় রাখেননি। দলের উইকেট রাখা প্রয়োজন বিবেচনায় চতুর্থ বলে কেবল সিঙ্গেল নিয়েছেন। তবে একেবারে থেমে যাননি। না থামার ধারাতেই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন পরে আরও চারটি। যার চতুর্থ চারটি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ক্যা রিবীয়দের বিপক্ষে ৭ উইকেটের অসাধারণ এক জয়। যে জয় লিটন ছাড়া পূর্ণতা পেত না।